ডিমলায় ৩ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় মাত্র ৬ চিকিৎসক

নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:১৬

ছবি : বাংলাদেশের খবর
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় প্রায় ৩ লাখ মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য মাত্র ৬ জন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করছেন। জনবল সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চিকিৎসক না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মক সংকটে পড়েছে।
৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার রোগী যাওয়া আসা করেন। চিকিৎসক না থাকায় অধিকাংশ রোগী ভোগান্তিতে পড়েন। বর্হিবিভাগে শতশত রোগী লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা না নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
আবু মোতালেব নামে এক রোগী বলেন, সকালে টিকিট হাতে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ডাক্তার দেখাতে পারিনি। ডাক্তার ভেতরে রোগী দেখার পর বাহিরের রোগী দেখতে বসে। ২০-২৫ জন রোগী দেখার পর আর সিরিয়াল নেয় না। অফিস বন্ধ করে দেয়। এতে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।
২০১০ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও দীর্ঘ ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও সেবার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় ৩ লাখ মানুষ কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, স্টাফ প্যাটার্ন অনুযায়ী এখানে ৩২ জন চিকিৎসকের পদ অনুমোদিত থাকলেও বাস্তবে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ছয়জন। এর মধ্যে একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার এবং চারজন মেডিকেল অফিসার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোগী ও স্বজনরা অভিযোগ করেন, নিয়ম অনুযায়ী বহির্বিভাগে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে দুপুর ১টার পর ডাক্তার আর রোগী দেখেন না। বিকালে আন্তবিভাগে ভর্তি রোগীদের সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও চিকিৎসক হাসপাতালে উপস্থিত হন না। ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মানও ভালো নয়।
স্বজনরা আরও অভিযোগ করেন, নিয়মিত ডাক্তার পাওয়া যায় না। সরকারি ঔষধ সব সময় সরবরাহ হয় না। ঔষধ বাহির থেকে কিনতে হয়। বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটারের ব্যবস্থা নেই। টয়লেট-বাথরুমের বেহাল অবস্থা। নেই ব্রেস্টফিডিং কর্ণার। কিছু চিকিৎসক হাসপাতালের বাইরে ব্যক্তিগত চেম্বার ও প্রসূতি রোগীদের সিজারের কাজে ব্যস্ত থাকেন।
রোগীর স্বজন মকবুল ইসলাম বলেন, পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় অনেক সময় রোগীদের ইমার্জেন্সি সেবা পেতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। জায়গার সংকটে মেঝে বা বারান্দায় শুয়ে চিকিৎসা নিতে হয়, আবার অনেকেই চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন।
রোগীর স্বজন মকবুল ইসলাম বলেন, পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় অনেক সময় রোগীরা ইমার্জেন্সি সেবা পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। জায়গার সংকটে মেঝে বা বারান্দায় শুয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। আবার অনেকেই চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন।
ডিমলা সদর এলাকার বাসিন্দা ইলিয়াস হোসেন বলেন, এত বড় এলাকায় যদি মাত্র ৬ জন ডাক্তার থাকেন, তাহলে আমরা কোথায় যাব? চিকিৎসা নিতে এসে শুধু হয়রানি আর অবহেলা পাচ্ছি। এখানে জরুরি ভিত্তিতে আরও চিকিৎসক নিয়োগের দাবি জানাই।
উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, ডিমলা হাসপাতালে শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা পাওয়া যায়। একটু বড় সমস্যা হলে রোগীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আমাদের যদি প্রচুর টাকা থাকতো, তাহলে সরাসরি রংপুরেই চিকিৎসা নিতে যেতাম। এখানে হাসপাতাল আছে, কিন্তু চিকিৎসক, বিছানা ও ঔষধের অভাব রয়েছে।
ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, এখানে জনবল ও চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। ঔষধ নেই এমন অভিযোগ সত্য নয়। সরকারিভাবে যে ঔষধ পাওয়া যায়, সেগুলো দেওয়া হয়। আর যেগুলো নেই, সেগুলো রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিনতে হয়। তারপরও আমরা আমাদের সাধ্যমতো চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা কম চিকিৎসক দিয়েও রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।
তৈয়ব আলী সরকার/এমবি