ওসির কাছে পৌঁছাতে পারেন না সাধারণ মানুষ, আইনশৃঙ্খলা সভায় অনাস্থা

নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:০৫
-(4)-68ccd6833b3fc.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
নাটোরের গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসমাউল হকের বিরুদ্ধে মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায় নানা অভিযোগ করা হয়েছে। এক পর্যায়ে ওসির ওপর অনাস্থা প্রকাশ করে তাকে প্রত্যাহারের দাবিও জানানো হয় সভায় উপস্থিত সদস্যদের পক্ষ থেকে।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
আইনশৃঙ্খলা সভার নারী প্রতিনিধি অঞ্জলী আফছারী ওসির সঙ্গে দেখা করতে না পারার আক্ষেপ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘নারীদের নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করেন তিনি। সম্প্রতি ভুক্তভোগী এক নারীকে নিয়ে থানায় গিয়েছিলেন, কিন্তু থানার মূল ফটক পেরোলেও ওসির সঙ্গে দেখা করতে দেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা। বাধ্য হয়ে একই সমস্যা নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে যেতে হয়েছে। থানায় এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে, সাধারণ মানুষ ওসির সঙ্গে দেখা করতে পারেন না এবং সমস্যার কথা খুলে বলতে পারেন না। বাধ্য হয়ে এসব মানুষ ইউএনও’র কাছে যাচ্ছেন।’
সভায় সংবাদকর্মীরা, যার মধ্যে দিল মোহাম্মদ, আলী আক্কাছ, রাশিদুল ইসলাম, মিজানুর রহমান ও আব্দুস সালাম রয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, সংবাদ সংক্রান্ত বিষয় নিয়েও ওসি ফোন ধরেন না, তাই বাধ্য হয়ে পুলিশ সুপারের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়।
এ সময় গণমাধ্যমকর্মী রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত এক মাসে একই এলাকায় ১৯টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এতে অন্তত ১ হাজার বিঘার সেচ ব্যাহত হচ্ছে। কৃষকরা অভিযোগ দেওয়ার পরও ট্রান্সফরমার উদ্ধার হয়নি। পুলিশ চোরচক্রকেও শনাক্ত করতে পারেনি। এছাড়া দিনমজুরদের অটোভ্যান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চুরি এবং মাদকের বিস্তার বাড়ছে। মানুষ নিঃস্ব হলেও পুলিশ এসব অন্যায় রোধে কার্যত কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলার এমন অবনতির ফলে ওসির প্রত্যাহার দাবি করেন।
সভায় সদস্য উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির আব্দুল খালেক বলেন, ‘ওসি আসমাউল হক শক্ত খুঁটির জোর দেখিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছেন। পুলিশ জনগণের সেবক, সেটা মনে করেই ওসি সাহেবকে কাজ করতে হবে। ৫ আগস্টে অনেক কিছু বদলেছে। ওসি সাহেব নিজেকে বদলান অথবা বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যান।’
সাংবাদিক দিল মোহাম্মদ ও আলী আক্কাছ বলেন, ‘তথ্য চাওয়ায় আগের স্টেশন সিংড়ার এক সাংবাদিককে ডেভিল হান্টে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলে পাঠিয়েছিলেন ওসি। সাংবাদিকদের আন্দোলনের পরও তাকে বদলি করা হয়েছে গুরুদাসপুরে, কিন্তু এখানে এসেও ওসি অসৌজন্যমূলক আচরণ শুরু করেছেন। আমরা তার প্রত্যাহার দাবি করছি।’
আইনশৃঙ্খলা সভার সভাপতি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা আফরোজ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘ওসি আসমাউলের অসৌজন্যমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন তিনিও। মোবাইল কোর্টের জন্য সময় মতো পুলিশ চেয়েও পাচ্ছেন না। সচিব এবং জেলা প্রশাসক আসলে প্রটোকল দিচ্ছে না পুলিশ। ৮ মাসে তিনি পুলিশ নিয়ে কোনো সফল অভিযান করতে পারেননি। ১২ সেপ্টেম্বর প্রায় দেড় লাখ মানুষের সমাগমে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সচিব, ডিআইজি, ডিসি উপস্থিত থাকলেও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সচিব ওসির কাছ থেকে প্রত্যাশিত সহায়তা পাননি। এতে থানা ও উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বিষয়টি তিনি উচ্চপর্যায়ে জানিয়েছেন।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে সভার সদস্য সচিব ওসি আসমাউল হক বলেন, ‘পুলিশের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতেই আমি কঠোর হতে বাধ্য হয়েছি। আমাকে ভুল বোঝা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি শাহজাহান আলী জানান, ‘অতি দ্রুত তাকে প্রত্যাহার করা হবে।’
- মেহেদী হাসান তানিম/এমআই