ফের দখলের মুখে কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়ি

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:৫২
-(25)-68d0112707b71.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে একের পর এক দোকান স্থাপনের মহোৎসব শুরু হয়েছে। গত দুই দিনে সৈকতের কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্টে রাতারাতি শতাধিক দোকান তৈরি হয়েছে। বলা হচ্ছে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অনুমতি পত্র নিয়ে এসব দোকান বসানো হচ্ছে।
তবে সরকার কক্সবাজারের সৈকত এলাকায় প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করেছে। ওই গেজেট অনুযায়ী, সৈকতের বেলাভূমিতে স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ। কিন্তু আইন না মেনে দীর্ঘদিন ধরে স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত থাকায় ২০১৭ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) একটি রিট দায়ের করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত সৈকতের জোয়ার-ভাটার মধ্যবর্তী লাইন থেকে প্রথম ৩০০ মিটার এলাকা ‘নো ডেভেলপমেন্ট জোন’ ঘোষণা করে এবং নির্দেশ দেয়, এই এলাকায় কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না।
এর প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের জন্য বেলার পক্ষে নোটিশ দেয়ালে স্থানীয়রা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু এর কয়েক দিনের মধ্যে অন্তত উচ্ছেদ হওয়া হাজারো দোকান আবার বসানো হয়। বর্তমানে এসব দোকান থাকায় নতুন করে দোকান তৈরিকে ঘিরে চলছে নানা আলোচনা।
স্থানীয়রা বলছেন, শুক্রবার রাত থেকে সৈকতের বালিয়াড়িতে এসব দোকান বসানো শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বসানো শতাধিক দোকানের রং ও আকৃতিতে মিল রয়েছে।
দোকান স্থাপনকারী তারেক নামের এক যুবক জানিয়েছেন, তিনি কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে টাকা দিয়ে দোকান বসানোর অনুমতি পত্র নিয়েছেন। এজন্যই দোকান বসিয়েছেন।
তবে অনুমতিপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুগন্ধা ঝিনুক মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জয়নাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘যদি অনুমতি বৈধ হয়, তাহলে রাতের আঁধারে কেন দোকান বসাতে হবে? সাধারণ ব্যবসায়ীদের সাথে অন্যায় হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী একটি সিন্ডিকেট অবৈধভাবে দোকান বসাচ্ছে।’
ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই দখল ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন আলোচিত দুই ব্যক্তি জাকির হোসেন ও নূরুল হুদা ওরফে গুরামিয়া। সম্প্রতি তারা নতুন করে ৭৪টি কার্ড কিনেছেন এবং রাতের আঁধারে দোকান বসানোর চেষ্টা চলছে।
অভিযোগের বিষয়ে নূরুল হুদা ওরফে গুরামিয়া সব অস্বীকার করেন। অপর অভিযুক্ত জাকির হোসেন দাবি করেছেন, তার কেবল একটি দোকান আছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আজিম খান বলেন, দোকান বসানো ব্যক্তিদের কাগজপত্র প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে। অবৈধভাবে দোকান বসানোর কোন সুযোগ নেই।
জেলা প্রশাসনের অনুমতিপত্র নিয়ে তিনি আরও বলেন, অনুমতি পত্রে বালিয়াড়ি এবং পরিবেশ নষ্ট হয় এমন স্থানে দোকান না বসানোর শর্ত রয়েছে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত (ডিআইজি) আপেল মাহমুদ বলেন, ‘বিচ দখল করে দোকান বসানো কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইতিমধ্যেই তাদের কাগজপত্র যাচাই চলছে। জেলা প্রশাসন অনুমতি দিলে, কোথায় দোকান বসানো হবে তা নির্ধারণ করবে। বালিয়াড়িতে বসানো দোকান সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।’
- ইমতিয়াজ মাহমুদ ইমন/এমআই