Logo

সারাদেশ

লোনা পানি সংকটে চিংড়ি-কাঁকড়া উৎপাদন হ্রাসের আশঙ্কা

Icon

আব্দুল কাদের, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৩৩

লোনা পানি সংকটে চিংড়ি-কাঁকড়া উৎপাদন হ্রাসের আশঙ্কা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের উপকূলীয় জনপদ বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়া, পদ্মাপুকুর ও মুন্সিগঞ্জ এলাকায় লোনা পানির অভাবে ব্যাপক হারে চিংড়ি মাছ ও কাঁকড়া মারা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরে চিংড়ি ও কাঁকড়া উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন হতে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সম্প্রতি বেড়িবাঁধের ভেতরে বসানো অবৈধ নাইন্টি পাইপ অপসারণ করেছে। এই পাইপগুলো ঘেরে নিয়মিত নদীর লোনা পানি সরবরাহ করতো। পাইপ অপসারণের পর ঘেরে পানি ঢোকানো সম্ভব হচ্ছে না।

পরিবেশবিদরা অভিযোগ করেছেন, উপকূলীয় বেড়িবাঁধে পাইপ বসানো নদীর বাঁধ ভাঙার প্রধান কারণ। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে অবৈধ পাইপ অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়।

শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, লোনা পানির বাগদা চিংড়ির ঘেরের পরিমাণ ১৭ হাজার ৫০০ হেক্টর। এরমধ্যে ১৬ হাজার ৩২৮টি ঘের। কাঁকড়া ঘের ১৮২ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ১১০টি।

বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বিকাশ মন্ডল জানান, পানির প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় ঘেরের পানি দ্রুত গরম হয়ে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে প্রতিদিন শত শত চিংড়ি ও কাঁকড়া মারা যাচ্ছে।

স্থানীয় ঘের মালিকরা জানিয়েছেন, উপকূলীয় এলাকায় মাছ ও কাঁকড়া চাষই মানুষের প্রধান জীবিকা। হঠাৎ পানির সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এবং অনেকেই ক্ষতির কারণে ঋণে জড়িয়ে পড়েছেন।

দুর্গাবাটি এলাকার ঘের ব্যবসায়ী বিকাশ চন্দ্র বলেন, ‘বেড়িবাঁধে পাইপ বসানো আইনত নিষিদ্ধ হলেও বিকল্প ব্যবস্থা না করে পাইপগুলো একসাথে তুলে নেওয়ায় আমরা চরম বিপাকে পড়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান, যেন বিকল্প খাল, স্লুইসগেট বা বৈধ জলপ্রবাহের ব্যবস্থা করা হয়।’

স্থানীয় কাঁকড়া ব্যবসায়ী অনাথ মন্ডল জানান, বুড়িগোয়ালিনীসহ আশপাশের এলাকায় ঘের নির্ভরশীল প্রায় কয়েক হাজার পরিবার রয়েছে। পানির সংকট চলতে থাকলে উৎপাদনে বড় ধস নামবে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, চলতি অর্থবছরে বাগদা চিংড়ির লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার ৭০৭ মেট্রিক টন এবং কাঁকড়ার উৎপাদন ১৫ হাজার ৪৬ মেট্রিক টন। লোনা পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় উৎপাদন কমতে পারে। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা করা যায়। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের শ্যামনগর উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম জানান, অবৈধ নাইন্টি পাইপ বেড়িবাঁধের ক্ষতি করে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বাঁধের ক্ষতি হতে পারে এমন কিছু রাখা যাবে না। এ কারণে পাইপ অপসারণ করা হচ্ছে।

বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, উপকূলে নির্মিত স্লুইসগেট ও কলগেট দীর্ঘদিন অযত্নে পড়ে আছে। সেগুলো সংস্থার মাধ্যমে ঠিক হলে মৎস্য চাষে পানির ঘাটতি হতো না।

এআরএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর