Logo

সারাদেশ

চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত আলু উৎপাদন, পুঁজি হারানোর শঙ্কায় চাষিরা

Icon

মো. আব্দুল ওয়াদুদ, শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:১৪

চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত আলু উৎপাদন, পুঁজি হারানোর শঙ্কায় চাষিরা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

বগুড়ার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগারে আলু মজুত রাখার কারণে বড় লোকসানের মুখে পড়েছেন। দরপতনে বিপুল পরিমাণ আলু হিমাগারে আটকা পড়ে আছে। সরকার নির্ধারিত দামেও আলু বিক্রি হচ্ছে না। পাইকাররা বেশি দামে কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

কাঙ্ক্ষিত দাম না থাকায় কৃষকরা পুঁজি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন। অনেকে হিমাগার থেকে আলু তুলছেন না। চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত আলু উৎপাদনের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

হিমাগার সংশ্লিষ্টরা জানান, শেরপুর উপজেলার তিনটি হিমাগার থেকে গত বছর এই সময় ৫০ শতাংশ আলু বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু এ বছর বিক্রি হয়েছে ৩০ শতাংশেরও কম। গত বছর আলু উৎপাদন করে কৃষকরা ভালো মুনাফা পেয়েছিলেন। এবারে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের লোকসানের পাশাপাশি হিমাগার মালিকরাও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

কৃষকরা বলছেন, হিমাগারে মজুত ৬০ কেজির এক বস্তা আলুর খরচ হয়েছে ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকা। হিমাগার ভাড়া যোগ করলে প্রতি বস্তায় খরচ পড়েছে দেড় হাজার টাকা। পাঁচ মাস সংরক্ষণের পরও বর্তমানে আলু বিক্রি হচ্ছে ৭৫০–৮০০ টাকায়। হিমাগার ভাড়া বাদ দিলে কৃষকরা পাচ্ছেন ৩০০–৩৫০ টাকা প্রতি বস্তা। এই দামে বিক্রি করলে প্রতি বস্তায় লোকসান হচ্ছে প্রায় ৮৫০ টাকা।

কয়েকজন পাইকার জানিয়েছেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় দাম না থাকায় সরকারি নির্ধারিত দামে আলু কেনাবেচা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরাও লোকসান করছেন। হিমাগারে মজুত আলু থাকলেও সরকারি দামে বাজারজাত করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। চাষিরা ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

শেরপুরের কৃষক আলী আজগর বলেন, সরকার আলুর দাম ২২ টাকা নির্ধারণ করলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বাজারে দাম ১২–১৩ টাকার মধ্যে। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি এবং হিমাগার ভাড়া কমানো হলে চাষিরা কমপক্ষে কিছুটা মূলধন রক্ষা করতে পারতেন।

মাথাইল চাপর গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গত বছর আলুর দাম বেশি থাকায় সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করেছিল। এবার লোকসান ঠেকাতে কোনো নজরদারি নেই। তিনি ১০০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে গড়ে ৬৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ৯০–১২০ মণ আলু উৎপাদন হলেও দাম কম থাকায় আলু কোন্ড স্টোরেজে রেখেছেন। ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও আলুর দাম নেই। অর্ধেক মূলধন ফেরত পাবেন কিনা, সে বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন চাষিরা।

কৃষি বিভাগ জানায়, এবারে লক্ষ্যাধিক জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদন বেশি হওয়ায় মৌসুমের শুরু থেকেই আলুর আশা অনুযায়ী দাম মেলেনি। হিমাগারে কৃষকের তুলনায় বেশির ভাগ আলু ব্যবসায়ীরাই মজুত রেখেছেন।

শেরপুরের আলু ব্যবসায়ী আল আমিন হোসেন বলেন, প্রতি বস্তা ৮০০ টাকায় দুই ট্রাক আলু কিনেছি। ঢাকার পাইকারি বাজারে পাঠাবো। কিন্তু চাহিদা না থাকায় পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। কাঁচামাল বাইরে রাখাও সম্ভব নয়। লোকসান হলেও বিক্রি করতে হবে।

এগ্রো আর্ট ইন্ডাস্ট্রি এন্ড কোল্ড ষ্টোরেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আব্দুর রশিদ জানান, গত বছর এই সময়ে হিমাগারে আলু বিক্রি চমৎকার ছিল। কৃষক, ব্যবসায়ী এবং হিমাগার মালিক সবাই লাভবান হয়েছিলেন। কিন্তু এবারে দাম না থাকায় কৃষকরা হিমাগারে আলু তুলছেন না। ছয় মাস অতিবাহিত হলেও ৭০ শতাংশ আলু হিমাগারে রয়েছে।

শেরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা আক্তার বলেন, আলুর দাম কম হওয়ায় কৃষকদের ক্ষতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। নির্দেশনা পেলে আলুর ২২ টাকার দাম নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এআরএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বাজার দর

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর