Logo

সারাদেশ

শতবর্ষী ‘নাও মহাল’, হাওরের জীবন ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি

Icon

ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৭

শতবর্ষী ‘নাও মহাল’, হাওরের জীবন ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি

ছবি : বাংলাদেশের খবর

প্রতি শনিবার মধ্যনগর বাজারের কাচারীঘাট সংলগ্ন গোরাডোবা হাওরে বসে ভাসমান নৌকার হাট। বর্ষা এলেই সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে বেড়ে যায় নৌকার চাহিদা। হাওরের জলপথে চলাচল, মাছ ধরা, পণ্য পরিবহন বা বিয়ের শোভাযাত্রা—সবকিছুর জন্য প্রয়োজন পড়ে নৌকার। এই চাহিদার মূল কেন্দ্র হয়ে ওঠে মধ্যনগর বাজারের শতবর্ষী নৌকার হাট, যা স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘নাও মহাল’ নামে।

বর্ষার পানিতে হাওরের বুক জুড়ে ঢেউ খেলতে থাকলে ভাসমান নাও মহালে জীবনের অন্য এক গল্প রচিত হয়। এটি শুধুই কেনাবেচার গল্প নয়, বরং হাওরের সংস্কৃতি, কষ্ট ও টিকে থাকার লড়াইয়েরও গল্প। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে ক্রেতা-বিক্রেতার মিলনমেলা। সারিবদ্ধভাবে বাঁধা নৌকার সারি, দামাদামি ও হিসাব-নিকাশ—সব মিলিয়ে হাটে থাকে উৎসবের আমেজ।

এ হাটে পাওয়া যায় খিলুয়া, কুশি, সরঙ্গা, চাচতলী, চডানাউ, বারকি সহ নানা ধরনের নৌকা। স্থানীয় প্রবীণদের মতে, ১৯২০-এর দশকে গৌরীপুরের জমিদার ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় মধ্যনগরে একটি পুকুর খনন করেন এবং তার পাশে গড়ে ওঠে বাজার ও নৌকার হাট। সেই থেকে প্রায় একশ বছর ধরে টিকে আছে ‘নাও মহাল’।

মধ্যনগরের প্রবীণ সমাজকর্মীরা জানান, এই হাট শুধুমাত্র কেনাবেচার জায়গা নয়, বরং হাওরবাসীর জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। একসময় হাটকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ মেলা, পালা-পার্বণ, গান-বাজনার আয়োজন থাকলেও বর্তমানে সেসব হারিয়ে যাচ্ছে। তারা আশা করেন, ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারী উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ইজারাদারদের মতে, এক হাটে কয়েকশ নৌকা বিক্রি হয়। মধ্যনগরের সঙ্গে সঙ্গে তাহিরপুর, ধর্মপাশা, নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা ও বারহাট্টা থেকেও মানুষ আসে হাটে।

মাকরদী গ্রামের নৌকার কারিগর সুস্থির রঞ্জন সরকার জানান, এবার ১০-১২ হাত মাপের নৌকা ৬-৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় আকারের নৌকার দাম ২০-২৫ হাজার টাকাও হয়।

মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল রায় বলেন, ‘ছয় মাস নাও, ছয় মাস পাও—এটাই হাওরের বাস্তবতা। শতবর্ষী এই নৌকার হাট হাওরবাসীর জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাটের সার্বিক উন্নয়ন ও ঐতিহ্য রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। হাটে আসা বিভিন্ন ধরনের নৌকার ডামি সংরক্ষণের পরিকল্পনাও রয়েছে।’

ইমাম হোসেন/এআরএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর