Logo

সারাদেশ

৬৫ হাজার টাকায় সন্তান বিক্রি করলেন মা

Icon

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২৭

৬৫ হাজার টাকায় সন্তান বিক্রি করলেন মা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ঝিনাইদহের মহেশপুরে মাত্র ৬৫ হাজার টাকার বিনিময়ে নিজের সদ্যজাত শিশুকে বিক্রি করেছেন এক মা। এ ঘটনায় উপজেলার নেপা বাজারের পিয়ারলেস হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সিলগালা করেছে প্রশাসন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জলুলী গ্রামের ওই মায়ের (২৮) দুটি সন্তান রয়েছে। চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তার স্বামী মারা যান। পরে দারিদ্র্য ও ঋণের চাপে পড়ে ওই মা নবজাতক বিক্রির ফাঁদে পড়েন। অভিযোগ উঠেছে, ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আয়া ইসমতারার প্রলোভন ও যোগসাজশে ৬৫ হাজার টাকার বিনিময়ে শিশুটি বিক্রি করা হয়।

গত মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ওই মায়ের সন্তান জন্ম নেয়। রাত ১২টার দিকে এক নারী শিশুটিকে নিয়ে চলে যান। পরে জানা যায়, শিশুটি কুমিল্লায় বিক্রি হয়েছে।

খবর পেয়ে রাতেই মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাদিজা আক্তার হাসপাতালে অভিযান চালান। তিনি হাসপাতালটি সিলগালা করেন এবং এর মালিককে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। একই সঙ্গে আয়া ইসমতারাকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ওই মায়ের পরিবারের সদস্যরা জানান, চার মাসের গর্ভবতী অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার স্বামী মারা যান। এরপর থেকে তার জীবনে নেমে আসে চরম সংকট। স্বামী কিংবা বাবা— কোনো বাড়িতেই ঠাঁই মেলেনি তার। অবশেষে বৃদ্ধ নানির বাড়িতে ঠাঁই হয় তার। দিন দিন পেটের সন্তান বড় হতে থাকে। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে প্রসব বেদনা উঠলে এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে স্থানীয় ওই ক্লিনিকে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে ছেলেসন্তান জন্ম দেন তিনি।

নবজাতকের মা বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর গর্ভাবস্থায় না পেয়েছি স্বামীর বাড়িতে ঠাঁই, না পেয়েছি বাবার বাড়িতে। নানির বাড়িতে থেকে পেটের সন্তানকে বড় করেছি। গর্ভবতী অবস্থায় এমনিতে লোকের কাছে ধার-দেনা করে কোনো মতে চলেছি। ক্লিনিকের খরচ, সন্তান মানুষ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। সে কারণে নবজাতক সন্তানকে দত্তক দিতে বাধ্য হয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা দত্তক নিয়েছে তাদের আমি চিনি না। শুধু শুনেছি তাদের বাড়ি কুমিল্লায়।’

এ ঘটনায় পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক সেলিম রেজা বাবু বলেন, ‘সিজারের পর রোগীর দেখাশোনা ছাড়া আমার করার কিছু নেই। রোগী যদি কারও সঙ্গে আপস করে সন্তান দিয়ে দেয়, সেটার জন্য আমি দায়ী নই।’

মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের (টিএইচও) হেলেনা আক্তার নিপা বলেন, ‘আমরা আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছি। অভিযানে ক্লিনিক মালিককে জেল দেওয়া হয়েছে। আর শিশু বিক্রির সহযোগিতাকারী নার্সের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়ম ধরা পড়ে— অনুমোদিত লাইসেন্স ছাড়াই কার্যক্রম, ডিপ্লোমা নার্সের পরিবর্তে আয়া দিয়ে চিকিৎসা, পর্যাপ্ত রুম ও সুবিধা না থাকা অপারেশন থিয়েটারে চারজন রোগী সিজারিয়ান অবস্থায় ছিলেন। পরে তিনজনকে রিলিজ দেওয়া হয়। নবজাতক বিক্রির ঘটনায় জড়িত রোগীকে মহেশপুর সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।’

মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাদিজা আক্তার বলেন, ‘ক্লিনিকের কাগজপত্রে ত্রুটি ও হাসপাতালের পরিবেশ ভালো না থাকায় পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক সেলিম রেজা বাবুকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। শিশু বিক্রির সহযোগিতাকারী নার্সকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে।’

এম বুরহান উদ্দীন/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

নবজাতক

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর