---2025-10-02T201559-68de8a214a551.jpg)
সাদা মেঘ আর কাশফুলের মিতালি। ছবি : বাংলাদেশের খবর
ভাদ্র-আশ্বিনের হাওয়ায় দুলছে শরতের কাশফুল। কাশফুলের শুভ্রতা ভাসমান সাদা মেঘের রঙে মিশে একাকার হয়ে উঠেছে। কখনো সাদা মেঘের আভরণে লুকিয়ে হাসছে সোনালি সূর্য। মেঘ-সূর্যের এই লুকোচুরিতে রঙিন হয়ে ওঠে শরতের কাশফুল। প্রকৃতির অদৃশ্য শিল্পীর আঁকা অপরূপ সৌন্দর্য্য মনকে নানা ভাবনায় ভাসিয়ে দেয়। আর তা যদি হয় বিল বা নদীর দুই ধার ঘেঁষে, তো কথাই নেই।
শরতের এই কাশফুল পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন মাত্রা পেয়েছে। দেশের উত্তরের ত্রি-সীমান্ত বেষ্টিত পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সীমান্তজুড়ে এখন কাশফুলের শুভ্রতার ছোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে। দুই বাংলার সীমান্তের বুক চিরে প্রবাহিত মহানন্দা নদী পর্যটনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে। নদীর দু’পারে সাদা মেঘের সঙ্গে মিশে মিতালি খুঁজছে কাশফুল।
মহানন্দা নদী ভারত থেকে প্রবেশ করে ২০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে আবার ভারতে ফিরে যায়। এই বিশ কিলোমিটার জুড়ে প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিয়েছে কাশফুল। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে খালি চোখে দেখা যায় পৃথিবীর সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা। যে যুগল পর্বতশৃঙ্গ প্রতি বছর নেপাল ও দার্জিলিংয়ে লাখ লাখ পর্যটককে আকর্ষণ করে, তা তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে কাছ থেকে দেখা যায়। কাঞ্চনজঙ্ঘার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কাশফুলের সৌন্দর্য। শরতের প্রকৃতি ও আকাশের শুভ্রতায় পর্যটকরা ভুলে যাচ্ছেন দু’দেশের মধ্যে প্রবাহিত মহানন্দা নদীর সীমারেখাও।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকের সঙ্গে স্থানীয় দর্শনার্থীরাও কাশবনে গিয়ে ছবি তুলছেন। বিভিন্ন মোবাইল ও ক্যামেরায় ছবি-ভিডিও ধারণ করে তা সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এসব প্রকৃতি প্রেমীদের মধ্যে কেউ প্রেমিক-প্রেমিকা, দম্পতি কিংবা পরিবারের সদস্য। কেউ কেউ সাদা কাশফুলের সঙ্গে মিলিয়ে পোশাক পরেছেন। নারীদের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ কিংবা চুলের খোঁপায় কাশফুলের ছোঁয়া শোভা পাচ্ছে।
মর্জিনা খাতুন মাহি বলেন, ‘মহানন্দা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যেমন আনন্দদায়ক, তেমনি প্রকৃতির শরতের কাশবনের সৌন্দর্য মন মাতাল করে। মন খারাপ থাকলে প্রকৃতির কাছে ছুটে আসি। দু’দেশের বুক চিরে প্রবাহিত মহানন্দা নদীর তীরে এমন সৌন্দর্য সত্যিই অনবদ্য।’
শায়মা জান্নাত ও শ্রাবন্তি বলেন, ‘আমরা আসেছিলাম কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে। নদীর ধারে কাশবন, ভাবাই যায় না। এখানে দাঁড়িয়ে নদী, পাহাড়, পাখি, পাথর শ্রমিকদের কাজ এবং ওপারে (ভারত) কাশফুলের সৌন্দর্য দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি।’
স্থানীয় কথাসাহিত্যিক হাফিজ উদ্দিন জানান, ষড়ঋতুর দেশে শরতের আবহ মুগ্ধকর। ভাদ্র-আশ্বিনে শরতের কাশবন সত্যিই দর্শনীয়। একসময় এই কাশিয়া দিয়ে গ্রামে বেড়া ও ঝাড় বানানো হতো, এখন এর সৌন্দর্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। নদীর তীর ঘেঁষে কাশবন গড়ে উঠলে পর্যটক সমাগম আরও বাড়বে। এই অঞ্চল পর্যটন ক্ষেত্রে আরও সমৃদ্ধ হবে।
তিনি আরও জানান, কাশফুল ছন গোত্রীয় এক ধরনের ঘাস, যার আদি নিবাস রোমানিয়া। ৭-৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে ওঠা এ উদ্ভিদটির চিরল পাতার দুই পাশে ধারালো দাগ থাকে। নদীর ধারে, জলাভূমি, চরাঞ্চল, পাহাড় বা গ্রামের উঁচু স্থানে কাশের ঝাড় জন্মে, তবে নদীর তীরে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।কাশফুল শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়ায় না, এতে রয়েছে ঔষধি গুণ। মানুষের পিত্তথলিতে পাথর, শরীরে ফোড়া বা ব্যথার ক্ষেত্রে কাশফুলের মূল ব্যবহার হয়। ইংরেজিতে এটির নাম ক্যাটকিন, বৈজ্ঞানিক নাম স্যাকরারাম এসপোটেনিয়াম। সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে পর্যটন শিল্পে বিকাশ ঘটানো সম্ভব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজ শাহিন খসরু বলেন, ‘পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া পর্যটনের জন্য অপার সম্ভাবনাময় এলাকা। এখানে হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘাসহ সীমান্তের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন। আমরা পর্যটকদের জন্য পর্যটন শিল্প উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা নিয়েছি। বিশেষ করে মহানন্দা নদীর ধারে গজে ওঠা কাশবন পর্যটকের সমাগম বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করার পরিকল্পনা করছি।’
- এসকে দোয়েল/এমআই