চলনবিলে বিপর্যস্ত শুঁটকি শিল্প, শঙ্কায় ৫ শতাধিক শ্রমিক

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:০৮
-(71)-68dfcac37c8d9.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
চলনবিলে দেশি মাছের সংকট দেখা দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে শুঁটকি শিল্প। মাছের ঘাটতির কারণে শুঁটকি তৈরির চাতালগুলোতে কর্মচাঞ্চল্য কমে গেছে। এতে প্রায় পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিক বেকার হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন।
জানা যায়, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোরের বিস্তৃত চলনবিল অঞ্চলের ২২টি জলাশয় ও ১৬টি নদীতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ দেশি মাছ আহরণ হতো। সেই মাছ থেকেই তৈরি হতো মিঠাপানির শুঁটকি। দেশীয় বাজার ছাড়াও এ শুঁটকি রপ্তানি হতো ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতারসহ প্রায় ২৫টি দেশে। কিন্তু চলতি মৌসুমে পানির পরিমাণ কমে যাওয়া ও নির্বিচারে মাছ শিকারের কারণে মাছের জোগান ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
তাড়াশ, চাটমোহর, সিংড়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের চাতালে গিয়ে দেখা যায়, শুঁটকি তৈরির সাজসরঞ্জাম ফাঁকা পড়ে আছে। শ্রমিকদের অনেকেই কাজ না পেয়ে বেকার বসে আছেন। বর্তমানে প্রতিদিনের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৫০ থেকে ৬০ মণ, যেখানে গত বছর এ অঞ্চল থেকে প্রায় ৮০০ টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর নির্ধারিত এক হাজার টনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চাতালের নারী শ্রমিকরা জানান, তারা দৈনিক মাত্র ১৫০ টাকা মজুরিতে কাজ করলেও মাছের সংকটের কারণে কাজের চাপ কমে গেছে। এতে তাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
চাতাল মালিকরা জানান, বাদাই জাল দিয়ে পোনা মাছ ধরা এবং খরা মৌসুমে পানি সেচ দিয়ে মাছ শিকারের কারণে চলনবিলে মাছের উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে গেছে। তাছাড়া মাছের দাম বেড়ে যাওয়ায় শুঁটকি তৈরির খরচও বেড়েছে। ফলে ব্যবসায় লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোকারম হোসেন বলেন, ‘চলনবিলের মাছের শুঁটকি দেশ-বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। তবে মা মাছ নিধন ও কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ না করলে মাছের প্রজনন হুমকির মুখে পড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর পানির স্তর দ্রুত কমে যাওয়ায় শুঁটকি উৎপাদন গত বছরের তুলনায় অন্তত ৩০ থেকে ৪০ মেট্রিক টন কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চলনবিলে মাছের সংকট যদি এভাবেই চলতে থাকে, তবে দেশের অন্যতম মিঠাপানির শুঁটকি শিল্প বিলীন হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।’
- ফিরোজ আল আমিন/এমআই