Logo

সারাদেশ

পর্যটনে বদলে যাচ্ছে তেঁতুলিয়া

Icon

এসকে দোয়েল, পঞ্চগড়

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪২

পর্যটনে বদলে যাচ্ছে তেঁতুলিয়া

ছবি : বাংলাদেশের খবর

বাংলাদেশের উত্তরের প্রান্তিক উপজেলা তেঁতুলিয়া। মানচিত্রের একেবারে শীর্ষে থাকা এই অঞ্চল ভৌগলিক অবস্থানের কারণে দীর্ঘদিন সীমান্তঘেরা জনপদ হিসেবেই পরিচিত ছিল। তবে এখন আর শুধু সীমান্ত নয়, তেঁতুলিয়ার পরিচিতি তৈরি হচ্ছে পর্যটনের শহর হিসেবে। পাহাড়, নদী, চা–বাগান, ঐতিহাসিক স্থাপনা, সীমান্তবন্দর—সব মিলিয়ে এখানে গড়ে উঠছে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পর্যটনকেন্দ্র।

পর্যটকদের মতে, দক্ষিণে টেকনাফ থেকে উত্তরে তেঁতুলিয়া ভ্রমণ করলে যেন বাংলাদেশের অর্ধেক ভ্রমণ শেষ হয়ে যায়। এ কারণেই দক্ষিণের কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন কিংবা সুন্দরবনের মতো উত্তরাঞ্চলেও তেঁতুলিয়া এখন সমান জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য প্রতিবছর হাজারো মানুষ ছুটে আসেন এ সীমান্ত নগরীতে।

শরৎ-হেমন্ত আর শীতকালে তেঁতুলিয়া যেন উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। দেশের ভেতরে দাঁড়িয়েই স্পষ্ট দেখা যায় হিমালয়ের সুউচ্চ শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। ভিসা বা পাসপোর্ট ছাড়াই এ দৃশ্য দেখা যায় বলে পর্যটকদের কাছে এর আবেদন আলাদা। ভোর কিংবা বিকেলের আকাশে যখন রোদের আভায় কাঞ্চনজঙ্ঘার বরফাচ্ছাদিত চূড়া সোনালি হয়ে ওঠে, তখন চোখ ফেরানো দায়।

তেঁতুলিয়া শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘা নয়, চারপাশ ঘিরে আছে প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য। সমতলে বিস্তীর্ণ সবুজ চা–বাগান, মহানন্দা নদী, পাথর উত্তোলনের দৃশ্য, সূর্যাস্ত—সবকিছুই পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ঐতিহাসিক স্থাপনা: ইংরেজ আমলে নির্মিত জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, পৃথু রাজার দিঘি, শাহী মসজিদ, গোলকধাম মন্দির, বার আউলিয়া মাজারসহ নানা প্রাচীন স্থাপনা।

শুধু তাই নয়, গবেষক, সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতারাও এখন তাদের কাজের জন্য বেছে নিচ্ছেন তেঁতুলিয়াকে। সাম্প্রতিক সময়ে এখানে নাটক ও সিনেমার শুটিংও হয়েছে।

একসময়কার পুরোনো বাজার এখন হয়ে উঠছে মহানন্দা পার্ক। মহানন্দা নদীর তীরে নির্মিত হচ্ছে ওয়াকওয়ে, যেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতেই দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য। নদীর বুক জুড়ে হাজারো শ্রমিকের পাথর উত্তোলনের দৃশ্যও পর্যটকদের কাছে এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা।

শিশুদের জন্য পার্ক, চিলড্রেন রাইডস, খেলার মাঠ, ডাকবাংলোতে পিকনিক কর্নার, ভলিবল ও টেনিস কোর্টসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। এতে পুরোনো বাজার নতুন রূপে ফিরে আসছে।

বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের সংযোগস্থল বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এখন পর্যটন ও বাণিজ্যের কেন্দ্র। এখান থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরেই ভারতের শিলিগুড়ি শহর। সেখান থেকে দার্জিলিং, সিকিম কিংবা ভুটান যাওয়া অনেক সহজ। বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও রোগীরা শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য এই পথ ব্যবহার করছেন নিয়মিত।

এখন বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্টে তৈরি হয়েছে দেশের সবচেয়ে উঁচু পতাকাস্তম্ভ। উচ্চতা ১৪০ ফুট। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা প্রযুক্তির মাধ্যমে পতাকা উড়তে থাকবে। এর পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে সুদৃশ্য গেইট ও আলোকসজ্জা। প্রশাসনের আশা, এসব স্থাপনা পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

তেঁতুলিয়ার পর্যটন উন্নয়নে গত এক দশকে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। ইউএনও সানিউল ফেরদৌস, সোহাগ চন্দ্র সাহা ও উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শাহীন তাঁদের সময়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ডাকবাংলো পিকনিক কর্নারে ভাস্কর্য, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কমপ্লেক্স, ওয়াচ টাওয়ার, ইকোপার্ক, ঝরনা ফোয়ারা, রাস্তা ও গেট—এসব নির্মাণে বদলে যায় তেঁতুলিয়ার চেহারা।

বর্তমান ইউএনও আফরোজ খসরু বলেন, ‘তেঁতুলিয়া পর্যটনের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি এলাকা। মহানন্দা পার্ক উন্নয়ন, পতাকা স্ট্যান্ড, ওয়াকওয়ে, আলোকসজ্জা—এসব কাজ চলছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও আবাসন নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি একটি অনলাইন হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ্লিকেশনও তৈরি হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য তেঁতুলিয়াকে পূর্ণাঙ্গ পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা।’

তেঁতুলিয়ার সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব ঘিরে এখানে গড়ে উঠছে নতুন নতুন হোটেল-রেস্তোরাঁ ও পর্যটন সেবা প্রতিষ্ঠান। পর্যটন খাতের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় মানুষদের জীবিকার সুযোগও তৈরি হয়েছে। ইকো ট্যুরিজমের সম্ভাবনাও বাড়ছে দিন দিন।

সব মিলিয়ে সীমান্তঘেরা জনপদ তেঁতুলিয়া এখন উত্তরবঙ্গের এক অনন্য পর্যটন কেন্দ্র। কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় দৃশ্য, প্রাচীন ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর প্রশাসনিক উন্নয়ন মিলিয়ে এই জনপদ ভবিষ্যতে দেশি-বিদেশি পর্যটনের অন্যতম গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে।

 এআরএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ভ্রমণ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর