এসিল্যান্ডের নির্দেশে সরকারি গাছ কেটে শোকজ খেলেন তহশিলদার

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:৫৯
---2025-10-05T165035-68e24f8bce931.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভূল্লী থানার বালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সরকারি গাছ টেন্ডার ছাড়াই কাটার অভিযোগ উঠেছে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তাকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশাদুল হক।
তবে তহশিলদারের দাবি, তিনি এসিল্যান্ডের (ভূমি) সরাসরি নির্দেশেই গাছগুলো কেটেছেন।
অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গাছ কাটার বিষয়টি ভাইরাল হয়ে পড়লে প্রশাসনের ভেতরে ও বাইরে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা।
শনিবার (৪ অক্টোবর) ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশাদুল হকের স্বাক্ষরিত এক পত্রে তহশিলদারকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস প্রাঙ্গণে বিনা অনুমতিতে ৮টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে তহশিলদার আবুল কালাম আজাদ অপরাধ করেছেন। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই সরকারি গাছ কর্তনের অপরাধে কেন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সেই বিষয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয় তাকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পাশেই একটি নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার কথা। এ কারণে মাঠে থাকা গাছগুলো কর্তনের অনুমতি ও মূল্য নির্ধারণের জন্য তহশিলদার আবুল কালাম আজাদ পূর্বে লিখিতভাবে আবেদন করেছিলেন। তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খাইরুল ইসলাম দায়িত্বে ছিলেন এবং তিনি গাছ কাটার অনুমতি দেননি।
এরপর নতুন এসিল্যান্ড হিসেবে ১৪ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব নেন মো. আশাদুল হক। তহশিলদার পুনরায় বৈঠকে গাছ কাটার প্রস্তাব উত্থাপন করলে এসিল্যান্ড মৌখিকভাবে গাছগুলো কর্তনের নির্দেশ দেন।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) গাছগুলো কাটা হলে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে প্রশাসনের ভেতরে দায় এড়ানো ও দোষ চাপানোর পালা শুরু হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্যারের (এসিল্যান্ড) নির্দেশেই গাছগুলো কাটা হয়েছে। অথচ আমাকে দোষি বানিয়ে শোকজ করা হলো। স্যার এখন অস্বীকার করছেন। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য গাছগুলো কাটা প্রয়োজন ছিল, তাই লিখিতভাবে আবেদনও করেছিলাম।
তিনি আরও বলেন, স্যার (এসিল্যান্ড) নিজে অফিসে এসেছিলেন, উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গেও কথা বলেছেন। গাছ না কাটলে ঠিকাদারের কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। ইউএনও স্যারও জানতেন বিষয়টা।
স্থানীয়দের ভাষ্য, তহশিলদার একা কখনোই সরকারি গাছ কাটতে পারেন না। তাদের মতে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ ছাড়া নিচের কর্মচারীর পক্ষে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া অসম্ভব।
তারা আরও বলেন, এক লক্ষাধিক টাকার বেশি মূল্যের গাছগুলো টেন্ডার ছাড়া কাটা হয়েছে। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তদন্ত করলে দেখা যাবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই এতে জড়িত।
এ বিষয়ে জানতে এসিল্যান্ড মো. আশাদুল হকের সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্দেশ দিলেই কি তিনি গাছ কাটবেন? এটা আইনের ভাষা নয়। আমাকে বা এসিল্যান্ডকে অবগত করা মানেই অনুমতি নয়। আমি তো আইনের বাইরে কিছু করি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বালিয়া ভূমি অফিসে নতুন ভবন নির্মাণ হবে, সে হিসেবে গাছ কাটা হতে পারে কিন্তু নিয়ম মেনেই সেটা করতে হয়।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে যদি এমনটা ঘটে থাকে, তাহলে তদন্ত করে দেখা হবে।’
- আবু সালেহ/এমআই