Logo

সারাদেশ

কক্সবাজারে প্রবারণার ফানুসে ভেসে উঠলো ফিলিস্তিনের মুক্তির আহ্বান

Icon

ইমতিয়াজ মাহমুদ ইমন, কক্সবাজার

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৩১

কক্সবাজারে প্রবারণার ফানুসে ভেসে উঠলো ফিলিস্তিনের মুক্তির আহ্বান

ছবি : বাংলাদেশের খবর

কক্সবাজারের রামুতে এবারের প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসবে আকাশে উড়লো ব্যতিক্রমী বার্তা—‘ফিলিস্তিন হোক মুক্ত’। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শান্তি ও মানবতার এই উৎসবে বার্তাটি ছুঁয়ে যায় উপস্থিত সবার হৃদয়।

২০১২ সালে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জ্বলে উঠেছিল রামুর বৌদ্ধ মন্দির। সেই ভয়াবহ আগুনে পুড়েছিল শুধু বিহারের দেয়াল নয়, সহাবস্থানের বিশ্বাসও। এক যুগ পর একই রামুতে এবার আকাশ ভরে ওঠে আলোকিত ফানুসে, যেখানে শান্তি, সহমর্মিতা আর মানবতার প্রতীক হয়ে ভেসে ওঠে—‘ফিলিস্তিন হোক মুক্ত’।

সোমবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সীমা বিহার প্রাঙ্গণে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব। রঙিন ফানুস উড়ানোর মুহূর্তে আকাশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে শান্তি, ভালোবাসা আর মানবতার বার্তা।

রামু সীমা বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, ‘আষাঢ় পূর্ণিমা থেকে আশ্বিন পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাসের বর্ষাবাস শেষে ভিক্ষুরা এই দিনে আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নতুন প্রতিজ্ঞায় ব্রতী হন। এ কারণেই প্রবারণা বৌদ্ধ ধর্মে ‘সংযম ও পরিশুদ্ধতার উৎসব’ হিসেবে পরিচিত।’

ফানুস উড়ানো প্রবারণা উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ। বৌদ্ধ বিশ্বাস অনুযায়ী, ফানুসের আলো অন্ধকার দূর করে শান্তি, কল্যাণ ও আলোকিত জীবনের প্রতীক। তাই এই রাতে ভক্তরা আকাশে ফানুস উড়িয়ে প্রার্থনা করেন নিজের ও বিশ্বের মঙ্গলের জন্য।

রামুর সাংবাদিক সুনীল বড়ুয়া বলেন, ‘প্রবারণা মানে শান্তি, সহমর্মিতা ও মানবতার জয়গান। আমরা চাই, পৃথিবীর সব যুদ্ধ, নিপীড়ন ও অন্যায়ের অবসান হোক। ফানুসে লেখা ‘ফিলিস্তিন হোক মুক্ত’ সেই মানবতার বার্তাই বহন করছে।’

তরুণ অ্যাক্টিভিস্ট ইনজামাম উল হক জানান, ‘প্রবারণার ফানুস শুধু আনন্দের নয়, প্রতিবাদেরও প্রতীক। আমরা ফিলিস্তিনের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানবিক আহ্বান জানিয়েছি। এই আলো যেন অন্ধকারে থাকা মানুষের জন্য আশার প্রতীক হয়।’

স্থানীয় যুবক অর্পণ বড়ুয়া বলেন, ‘যেখানে ঘৃণা, সেখানে আলো জ্বালানোই বৌদ্ধ ধর্মের মূল বার্তা। প্রবারণার ফানুস সেই বার্তাই আকাশে ছড়িয়ে দেয়।’

কক্সবাজার শহরের অগগমেধা ক্যায়াংসহ জেলার প্রায় সব মন্দিরেই চলছে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, প্রার্থনা ও ফানুস উড়ানোর আয়োজন।

উৎসব ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো। ভিড় নিয়ন্ত্রণ, যান চলাচল ও নিরাপত্তায় পুলিশ, র‍্যাব ও আনসারের যৌথ টহল দেখা গেছে সন্ধ্যার পর থেকে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রবারণা পূর্ণিমা শান্তির উৎসব। আমরা চাই, উৎসবের আবহে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা বা নিরাপত্তা ঝুঁকি না থাকে। তাই জেলা জুড়ে বাড়ানো হয়েছে টহল ও নজরদারি। সব কিছু শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হচ্ছে।’

ধর্মীয় শান্তি, মানবতার বার্তা আর ফানুসে লেখা ‘ফিলিস্তিন হোক মুক্ত’—সব মিলিয়ে এবারের প্রবারণা পূর্ণিমা কক্সবাজার জুড়ে পরিণত হয়েছে শান্তি ও সহমর্মিতার প্রতীক এক অনন্য উৎসবে।

এআরএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ফিলিস্তিন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর