Logo

সারাদেশ

সন্তান বিক্রির টাকায় চলছে লালন-মারুফার সংসার

Icon

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:২০

সন্তান বিক্রির টাকায় চলছে লালন-মারুফার সংসার

ছবি : বাংলাদেশের খবর

দারিদ্র্য কখনও কখনও মানুষকে এমন সীমান্তে ঠেলে দেয়, যেখানে মানবতার কণ্ঠস্বরও হারিয়ে যায় ক্ষুধার গর্জনে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের শ্রীঘর গ্রামের তেলি বাড়ির বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী লালন ও তার স্ত্রী মারুফা বেগম যেন সেই বাস্তবতারই নির্মম প্রতিচ্ছবি। সংসারের অভাব-অনটনের বোঝা বইতে গিয়ে তারা বিক্রি করেছেন নিজেদের সন্তান!

জন্মের আধা ঘণ্টার মধ্যেই এক নবজাতককে তুলে দেওয়া হয় অন্যের হাতে। বিনিময়ে মেলে কিছু টাকা আর সামান্য চাল। ওই সন্তানটিই ছিল লালনের ষষ্ঠ সন্তান। এর দেড় মাস পর সপ্তম সন্তানের জন্মের ১৪ দিনের মাথায় তাকেও বিক্রি করে দেন তারা। এবারও বিনিময়ে মেলে কিছু অর্থ।

মোহাম্মদ আলী লালন, ‘ছোট থাকতেই কথা দিয়েছিলাম। মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়ও দেয়নি। কথা যখন দিয়ে ফেলেছি, সেজন্য কিছু বলতে পারি না। এখন ছেলেটা কোথায় আছে, কার কাছে আছে, কিছুই জানি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এতগুলো ছেলেমেয়ে নিয়ে চলতে পারি না। খেতে দিতে পারি না। আমি সন্তান বিক্রি করি না, যারা নেয়, তারা খুশি হয়ে যা দেয় তাই রেখে দিই। এই বার দেওয়ার সময় কাগজ করে দিয়েছি, যেন মাঝে মাঝে ছেলেটার মুখ দেখতে পারি। তবে তারা কোথায় গেছে জানি না, শুনেছি ঢাকায় নিয়ে গেছে।

জানা গেছে, লালন পেশায় একজন ভবঘুরে। স্ত্রী মারুফা ভিক্ষা করেন, বড় সন্তানদের দিয়েও একই কাজ করানো হয়। বিয়ের দশ বছরে সাতটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এই দম্পতি-কিন্তু অভাবের কারণে দুইজনকে বিক্রি করেছেন টাকার বিনিময়ে।

তাদের জীবন যেন এক নির্মম দারিদ্র্যের প্রতিচ্ছবি। থাকেন অন্যের জমিতে তোলা এক ভাঙাচোরা টিনের ঘরে। নিজস্ব কোনো বাড়ি নেই। ভেতরে নেই কোনো আসবাব, নেই ঘুমানোর বিছানা। দুপুরের রোদ ঘর ভেদ করে ঢুকে পড়ে, আর বৃষ্টি হলে পানি পড়া তাদের কাছে নিত্য ঘটনা। রান্নার সামান্য পাতিল আর কয়েকটা কাপড়-এটাই তাদের সম্বল। বাজার থেকে কুড়িয়ে আনা পুঁটি মাছ দিয়ে রান্না করা তরল ঝোল আর ভাতই তাদের বিলাসিতা।

মোহাম্মদ আলী লালন জানান, তার বাবার চিকিৎসার খরচ জোগাতে আগেই বাড়ি বিক্রি করে দিতে হয়েছিল। এরপর এলাকার মানুষের সহায়তায় তৈরি করা এক ছোট্ট ঘরেই এখন তাদের আশ্রয়।

মারুফা বেগম বলেন, ‘নিজের বাড়ি নেই, একজন জায়গা দিয়েছে। এলাকার মানুষ ঘর করে দিয়েছে। মাটিতে ঘুমাই, বাহিরে চুলা আছে সেটাতে রান্না করি। এতগুলো ছেলেমেয়ে যখন কষ্ট তো করতেই হবে।

বর্তমানে তাদের ঘরে পাঁচ সন্তান আছে। এর মধ্যে বড় মেয়েটির বয়স আট বছর-মাঝে মাঝে বিদ্যালয়ে যায়। বাকিরা এখনো ঠিকমতো কথা বলতে পারে না।

স্থানীয়রা জানান, লালন-মারুফা দম্পতির এমন দুর্দশা ও সন্তান বিক্রির ঘটনা জানার পর তারা অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছেন। তবে দম্পতির সঙ্গে সচেতনতামূলক আলোচনা বা সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

নাসিরনগর উপজেলা জামায়াতে ইসলামির আমির মো. আমীরুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের দুই সন্তান বিক্রির খবর শুনেছি। উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে পরিবারটির জন্য কিছু করার চেষ্টা করব।’

নাসিরনগর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রাকেশ পাল বলেন, ‘লালনের স্ত্রী ভিক্ষা করেন। ভিক্ষুকদের নিয়ে সরকারের একটি প্রকল্প আছে। সেখান থেকে ওই নারীকে সহায়তা করার চিন্তা করছি।’

  • লিটন হোসাইন জিহাদ/এমআই

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

জনদুর্ভোগ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর