Logo

সারাদেশ

কোটালীপাড়ায় নিম্নবিত্তের আয়ের নতুন উৎস কচুরিপানা

Icon

কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:২২

কোটালীপাড়ায় নিম্নবিত্তের আয়ের নতুন উৎস কচুরিপানা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা বানারজোর, তালপুকুরিয়া, গজালিয়া, নয়াকান্দি ও কাচারিভিটা গ্রাম। এখানকার খাল ও বিল জুড়ে মাইলের পর মাইল বিস্তৃত কচুরিপানা প্রথমে দৃষ্টিকে বিভ্রান্ত করলেও এই কচুরিপানাই এলাকায় নিম্নবিত্তদের আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

সকল বয়সের নারী-পুরুষ, এমনকি শিক্ষার্থীরাও এটি আয়ের সহযোগী পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। সকাল হলে ছোট নৌকায় কচুরিপানা সংগ্রহে বের হন তারা। সংগ্রহকারীদের তালিকায় রয়েছেন গৃহবধূরাও।

সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামীণ সড়কের পাশেই কাঁচা কচুরিপানা শুকানোর কাজে ব্যস্ত শংকর বাড়ৈ। তিনি বলেন, ‘ভ্যানে করে কচুরিপানা কিনতে আসেন উদ্যোক্তারা। মাঘ থেকে জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত মৌসুম থাকলেও সংগ্রহ চলে সারা বছর। জলাশয় থেকে কচুরিপানা কাটার পর শুকানোর প্রক্রিয়ায় প্রায় ৫–৬ দিন লাগে। প্রতি কেজি শুকনো কচুরিপানা বিক্রি হয় ৫২ টাকায়। ১ কেজি শুকনো কচুরিপানা পেতে সংগ্রহ করতে হয় প্রায় ২.৫–৩ কেজি কাঁচা কচুরিপানা। প্রতি মণ কাঁচা কচুরিপানা ১০০–১২০ টাকায় এবং শুকনা বিক্রি হয় ১,৫০০–২,০০০ টাকায়। এর ফলে অনেক মানুষ বিনা পুঁজিতে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।’

শুকানোর কাজে ব্যস্ত তাহীনুর বেগম বলেন, ‘সংসারের কাজ শেষ করে কচুরিপানার ডাটা শুকানোর কাজ করি। প্রতিদিন ৩–৪ ঘন্টা রোদে থাকতে হয়। এর আয় থেকে নিজের খরচ মেটানো এবং সংসারে সহযোগিতা করা সম্ভব হচ্ছে।’

নিলুফা বেগম জানান, ‘বাড়ির উঠান বা কাছাকাছি মাঠে ডাটা শুকানোর সুবিধা থাকায় বাড়ির কাজের সঙ্গে মিলিয়ে করা যায়। বাড়তি আয় হওয়ায় খুশি।’

স্কুলছাত্র নয়ন বলেন, ‘বাবা-মায়ের কাজে সহযোগিতা করতে স্কুল থেকে ফিরে অবসর সময় কাজে লাগাই। এখন দৈনিক ১০০–২০০ টাকা আয় করি।’

কোটালীপাড়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. এনায়েত বারী বলেন, ‘কচুরিপানা সাধারণত ১৫–২০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। দণ্ডে অবস্থিত পাতার মধ্যে ৬টি পাপড়ি যুক্ত ৯–১০টি নীল-হলুদ-সাদা পুষ্প থাকে। এটি কমেলিনেলস বর্গের পন্টিডেরিয়াসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, বৈজ্ঞানিক নাম ইচোরনিয়া ক্রাসিপস। বাংলাদেশের প্রজাতি ‘ব্রাজিলান কচুরিপানা’ নামে পরিচিত। এটি দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে, প্রায় দুই সপ্তাহে দ্বিগুণ হয়ে যায়।’

কোটালীপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এস এম শাহজাহান সিরাজ বলেন, ‘ফেলনা ও অযত্ন কচুরিপানাও অর্থ সৃষ্টির সম্ভাবনা রাখে। এটি রপ্তানিযোগ্য পণ্যের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফুলঝুড়ি, রঙিন পাপোশ, রকমারি ফুলদানি, ব্যাগ, টুপি, জায়নামাজসহ বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরি হচ্ছে। ফলে গোপালগঞ্জের শতশত পরিবার কচুরিপানা থেকে কর্মসংস্থান পাচ্ছে।’

কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় বলেন, ‘কচুরিপানা মাটিতে শক্তি যোগায়। বিল বা ঝিলে ভাসমান কচুরিপানার ওপর মাটি ও গোবর সার ফেলে ধাপ ভুর তৈরি করে লাউ, পুদিনা, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি চাষ করা যায়। পচনশীল অংশ ভারী ধাতু শোষণ করে। শুকনো কচুরিপানা দিয়ে তৈরি পণ্য ১০ বছর পর্যন্ত টেকসই হতে পারে।’

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাগুফতা হক বলেন, ‘কচুরিপানা দেখতে সাধারণ ফুলের মতো হলেও অর্থমূল্য নেই। কচুরিপানা সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব, যা ক্রোমিয়াম, নিকেল, কোবাল্ট, ক্যাডমিয়ামসহ ক্ষতিকর ধাতু শোষণ করে। পচনশীল হওয়ায় কচুরিপানা থেকে তৈরি পণ্য পরিবেশবান্ধব এবং মৃদু সুবাস ছড়ায়।’

অংকন তালুকদার/এআরএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর