মিঠাপুকুরে ভেজাল গুড় উৎপাদন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন
মিঠাপুকুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২:০০
ছবি : বাংলাদেশের খবর
মিঠাপুকুর উপজেলায় অবৈধভাবে কেমিক্যাল ও ক্ষতিকর রং মিশিয়ে ভেজাল গুড় উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার শুকুরেরহাটে শাপলা চত্বরে স্থানীয় এলাকাবাসীর উদ্যোগে এই মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয়রা জানান, শুকুরেরহাট এলাকার আখতারুল মিয়া, নালু মিয়া, মুকুল মিয়ার মালিকানাধীন মেসার্স মিল্লাত ট্রেডার্সসহ খামারপাড়ের কয়েকটি বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে গুড় তৈরি হচ্ছে। এসব গুড়ে আখের রসের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও রং, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। রং হিসেবে অনেক সময় সিঁদুর বা শিল্পজাত রঙিন পদার্থ মেশানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এই ভেজাল গুড় শুধু মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে না, বরং আখ চাষি ও প্রকৃত গুড় উৎপাদকদের বাজারও নষ্ট করছে। প্রশাসন বারবার অভিযান চালালেও এসব কারখানা আবারও কার্যক্রম শুরু করছে।
বক্তারা আরও বলেন, দেশের মানুষ ভেজাল খাদ্যদ্রবণের কারণে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন, এবং অনেক মানুষও প্রাণ হারান দুরারোগ্য ক্যানসারের কারণে। জনবহুল দেশে জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিরাপদ খাবার উৎপাদন ও বিক্রয়ে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন’ বাস্তবায়ন জরুরি।
গোলাম মোস্তফা বুলু বলেন, সব ধরণের খাদ্যদ্রব্য ও ভোগ্যপণ্য ভেজাল মুক্ত রাখতে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩’ ও ‘ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৫’ অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়েছে।
মাজহারুল ইসলাম শাফিন বলেন, ‘জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারকে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে। দেশের প্রায় সব ভোগ্যপণ্যের মধ্যে ভেজাল ঢুকে গেছে। অধিক লাভের আশায় অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও উৎপাদকরা খাদ্যে ভেজাল মেশাচ্ছেন। শক্ত হাতে এগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব না হওয়ায় তা এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।’
রিপন আহমেদ বলেন, ‘রমজান মাসকে সামনে রেখে ভেজাল গুড় তৈরি এবং মজুদে ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণীর কারখানা মালিক ভেজাল গুড় তৈরিতে দিনরাত মরিয়া হয়ে উঠেছেন। প্রশাসনের নাকের ডগায় গড়ে ওঠা এসব কারখানার মধ্যে শুকুরেরহাট এলাকার পশ্চিম গেনারপাড়া ও ফুলচৌকি খামারপাড়ের একাধিক কারখানা রয়েছে।’
স্থানীয় কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসন একদিন এসে জরিমানা করে চলে যায়, কিন্তু কয়েকদিন পরই তারা আবার আগের মতোই গুড় তৈরি শুরু করে। আমরা চাই, স্থায়ীভাবে এসব কারখানা বন্ধ করা হোক।’
জানা যায়, চলতি বছরের ৩১ আগস্ট মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে মিল্লাত ট্রেডার্সের মালিককে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩’-এর ৩২ ধারা ও ‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫’-এর ৬(ক) ধারায় দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, জরিমানা ও কারখানা সিলগালা করা সত্ত্বেও এখনো অবৈধভাবে গুড় উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ চলছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মানববন্ধনে এলাকাবাসী অবৈধ গুড় উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ও স্থায়ীভাবে এসব কারখানা বন্ধের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
- মো. রাখিবুল হাসান রাখিব/এমআই


