Logo

সারাদেশ

মানিকগঞ্জে অন্যের স্ত্রীকে নিয়ে শ্রমিকদল নেতা উধাও

Icon

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:৩৫

মানিকগঞ্জে অন্যের স্ত্রীকে নিয়ে শ্রমিকদল নেতা উধাও

ছবি : সংগৃহীত

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক রাজু হোসেনের রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে পরকীয়া ও নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক এই শ্রমিকদল নেতা সম্প্রতি এক বিবাহিতা নারীকে নিয়ে উধাও হয়েছেন-এমন ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।

রাজনীতির সঙ্গে জড়িত একজন নেতা হয়ে রাজু হোসেনের এ ধরনের আচরণ স্থানীয়ভাবে তীব্র নিন্দার জন্ম দিয়েছে। একজন জননেতার নৈতিকতা যেখানে সমাজের আদর্শ হওয়ার কথা, সেখানে তার এই কর্মকাণ্ড দুইটি পরিবারের শান্তি ও তিনটি শিশুর ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

স্থানীয়রা জানান, দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় এবং সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে রাজু হোসেনের বিরুদ্ধে দলীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

জানা গেছে, ২০০৬ সালে শিবালয়ের তেওতা বাছেট এলাকার আয়নাল হোসেনের ছেলে মো. শামিম হোসেনের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী কাটাখালি গ্রামের লিয়াকত আলীর মেয়ে সানজিদা আক্তারের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের এক ছেলে সন্তান রয়েছে। ২০১২ সালে সানজিদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা পদে যোগ দেন। শামিমের সহযোগিতা ও অর্থায়নেই স্ত্রী লেখাপড়া ও চাকরিতে অগ্রসর হন।

তবে শামিম বেসরকারি একটি ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত থাকায় অন্য জেলায় অবস্থান করতেন। এ সুযোগে শিবালয় উপজেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক রাজু হোসেনের সঙ্গে সানজিদার ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। প্রায় তিন বছর আগে তাদের পরকীয়া সম্পর্ক ফাঁস হয় বলে অভিযোগ করেন শামিম হোসেন। 

তিনি বলেন, ‘স্ত্রীর আচরণে সন্দেহ হওয়ায় নজরদারি শুরু করি। এরপর রাজুর সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্কের প্রমাণ হাতে আসে। সংসারে ঝামেলা তৈরি হলেও সম্পর্ক তারা গোপনে চালিয়ে যায়।’

সম্প্রতি সানজিদা কলাগারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে রাজুর সহযোগিতায় উথলি এলাকায় বাসা ভাড়া নেন। সেখানে স্বামীর বাড়ি থেকে গহনা, নগদ টাকা ও আসবাবপত্র নিয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই বাসায় স্থানীয়দের কাছে রাজু ও সানজিদা হাতেনাতে ধরা পড়েন এবং রাজুকে গণপিটুনি দেওয়া হয়।

শামিম বলেন, ‘সানজিদা বাড়ি ফেরার কথা বলে আমার কাছ থেকে আরও সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়েছে। কিন্তু বাড়ি ফিরে না এসে জুন মাসে আমাকে তালাক পাঠায়। এখন আমার একমাত্র সন্তানকে নিয়ে রাজুর সঙ্গে পালিয়ে গেছে।’

 এ ঘটনায় শিবালয় থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।

এদিকে একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এবার তার প্রথম স্ত্রীও আইনি অভিযোগ তুলেছেন। মানিকগঞ্জের শিবালয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে পরকীয়া, নির্যাতন ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন রাজু হোসেনের স্ত্রী মোছা. আইরিন আক্তার। এ বিষয়ে তিনি শিবালয় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, প্রায় ১৭ বছর আগে রাজু হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে দুই সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর স্বামীকে নিজের পিতার ব্যবসা দেখাশোনার দায়িত্ব দিলে রাজু হোসেন তার পিতার প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। পরবর্তীতে তিনি পরকীয়ায় জড়িয়ে আইরিনকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকেন। সম্প্রতি রাজু হোসেন দৌলতপুরের সানজিদা আক্তার নামে এক গৃহবধূকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করে সংসার শুরু করেছেন।

গৃহবধূ আইরিন আক্তার আরও অভিযোগ করেন, তার দেওয়া স্বর্ণালংকার, জমি, গরু, মোটরসাইকেলসহ পরিবারের দেওয়া ফার্নিচার ও ফেরিঘাটের শেয়ার দখলে রেখেছেন রাজু হোসেন। বর্তমানে তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের কোনো খোঁজখবর বা ভরণপোষণ দিচ্ছেন না।

অন্যদিকে রাজুর প্রথম স্ত্রী আইরিন আক্তার বলেন, ‘রাজুর সঙ্গে আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। কিন্তু সে অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্ক করেছে। পারিবারিকভাবে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করা হলেও সে আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। এখন শুনছি, ওই নারীকে বিয়ে করেছে।’ তিনি বিষয়টি জেলা শ্রমিকদলের সভাপতির কাছেও লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

মানিকগঞ্জ জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি আব্দুর কাদের বলেন, ‘বিষয়টি এখনো আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে। তবে এটি ফৌজদারি বিষয়। তাদের আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

  • আফ্রিদি আহাম্মেদ/এমআই

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

বিএনপি

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর