
ভোরের আলো
ফোটে, পৃথিবী
জেগে ওঠে
নতুন দিনের
আশায়—তবে
ইসলামপুরের এক
কোণে কিছু
মানুষ দিন
শুরু করেন
আয়নায় নিজের
মুখ দেখে
দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
মুখজুড়ে লম্বা
লোম—কখনও
গোঁফ, কখনও
দাঁড়ির মতো—নিজের প্রতিচ্ছবিতেই
যেন লজ্জা,
কষ্ট আর
অপমানের ইতিহাস
লেখা। এই
মুখ নিয়েই
বেঁচে আছেন
জামালপুরের ইসলামপুর
উপজেলার চারটি
পরিবারের ১০
জন নারী-পুরুষ। সমাজ
যাদের চিনে
‘লোমশ পরিবার
নামে তবে
তাদের কাছে
এই নামই
যেন এক
জীবন্ত অভিশাপ।
ইসলামপুর পৌরসভার উত্তর দরিয়াবাদ ফকিরপাড়া গ্রামের চারটি পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এমন অদ্ভুত এক রোগে ভুগছেন। জন্ম থেকেই মুখ ও শরীরজুড়ে গজিয়ে ওঠা লম্বা লোম তাদের জীবনকে করেছে অসহনীয়। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় এখন তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
২৮ বছরের শিরিনা আক্তারের গল্প যেন এক অনন্ত বেদনা। জন্ম থেকেই মুখভর্তি লোম, সাথে বাঁকা মেরুদণ্ড আর বিশাল কুঁজো—তার শরীরটাই যেন বঞ্চনার প্রতীক। ছোটবেলায় স্কুলে তাকে নিয়ে হাসাহাসি করত সহপাঠীরা। বড় হয়ে বিয়ে হলেও মুখের লোমের কারণে স্বামী ছেড়ে চলে যায়। এখন প্রতিবেশীর জমির ওপর ছোট্ট দোচালা ঘরে একা জীবন কাটছে তার। কেবল প্রতিবন্ধী হিসেবে একটি ভাতা পান—যা বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট নয়।
এমেইচএস/এসআর/
শিরিনার মা, ভাই, চাচা, ভাতিজি সহ আরও বেশ কয়েকজন একই ভাগ্যের সহযাত্রী। প্রায় দুই শতাব্দী ধরে এই গোত্রের মানুষরা এমন অস্বাভাবিক লোম নিয়ে জন্ম নিচ্ছে।
সমাজের মানুষদের কৌতূহল আর কটাক্ষ যেন তাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে। কেউ বলে “লোমমানব”, কেউ আবার বলে “অভিশপ্ত পরিবার”। তাই তারা ঘর থেকে বের হতেও ভয় পান। তবু বেঁচে থাকার তাগিদে, প্রতিদিনের এই লজ্জা আর কষ্ট নিয়েই দিন কাটান।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এ. এ. এম. আবু তাহের বলেন, বংশগতভাবে এই পরিবারগুলোর সদস্যদের শরীরে অতিরিক্ত লোম গজানোর কারণ হরমোনজনিত সমস্যা। তবে সুচিকিৎসা পেলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।”
তবে, সেই সুচিকিৎসা পাওয়াই যেন আজ তাদের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। দুই বেলা খাবার জোটানোই যেখানে কঠিন, সেখানে চিকিৎসার ব্যয় বহন করা তাদের পক্ষে কল্পনাতীত।
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তারা শুধু একটি আশাই করেন—“একদিন হয়তো কেউ আমাদেরও মানুষ হিসেবে দেখবে।”
সরকার ও সমাজের বিত্তবানরা যদি একটু সহানুভূতির হাত বাড়ান, তাহলে হয়তো “লোমশ পরিবার”-এর সদস্যরাও একদিন আয়নায় নিজের মুখ দেখে হাসতে পারবেন।