Logo

সারাদেশ

আজ ভাঙবে সাধুর হাট, ছেঁউরিয়ায় লালন স্মরণোৎসব

Icon

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:১৭

আজ ভাঙবে সাধুর হাট, ছেঁউরিয়ায় লালন স্মরণোৎসব

ছবি : বাংলাদেশের খবর

অসংখ্য বাউল, সাধু, গুরু ও বৈষ্ণবের আগমনে এখন মুখরিত কুষ্টিয়ার ছেঁউরিয়ার লালন আখড়াবাড়ি। অনুষ্ঠানে একতারা-দোতারা, ঢোল-খোল, বাঁশি আর প্রেমজুড়ির তালে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছেন বাউলরা। বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইজির মৃত্যুর ১৩৫ বছর ধরে এভাবেই বাউল সাধকরা জড়ো হন বাউলতীর্থে।

এবার ১৭ অক্টোবর সাঁইজির তিরোধান দিবস উপলক্ষে আগে থেকেই ভক্তরা ছুটে আসতে শুরু করেন আখড়াবাড়িতে। এক উদাসী টানে মানুষ দলে দলে, হাজারে হাজারে ছুটে এসেছেন এখানে, যেখানে মিলন ঘটেছে নানা ধর্ম ও বর্ণের মানুষের। কেউ এসেছেন ধবধবে সাদা পোশাকে, কেউ গেরুয়া বসনে। সাঁইজির টানে এ ধামে বাউল ছাড়াও সাধারণ দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেছে। সমাধিতে ফুল, আতর ও গোলাপ ছড়িয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন হাজারো শিষ্য-ভক্ত।

উৎসবে যোগ দিতে দেশের বাইরে থেকেও এসেছেন অনেকে। ‘বাড়ির পাশে আরশীনগর’, ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’, ‘সত্য বল সুপথে চল’, ‘এলাহি আলামিন গো আলা বাদশা আলমপনা তুমি’-এ রকম অসংখ্য লালনগীতির সুরে মুখর পুরো বাউলধাম। লালন মাজারের আশপাশ ও মরা কালীগঙ্গার তীর ঘেঁষে বাউলরা ছোট ছোট আস্তানা গেড়ে গানে গানে স্মরণ করছেন সাঁইজিকে। বাউল-ফকিরদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে গাইছেন ভক্তরাও।

দূর-দূরান্ত থেকে সাদা পোশাকে বাউল সাধকরা একতারা, দোতারা, ঢোল, খোল, বাঁশি, প্রেমজুড়ি, চাকতি ও খমক হাতে দলে দলে এসেছেন। ক্ষণে ক্ষণে ছোট ছোট মজমা থেকে নৃত্য-সঙ্গীতের তালে ছলকে উঠছে ভাববাদী ঢেউ। কেউ লুঙ্গি পরে নাচছেন, কেউ গাইছেন খোলা গায়ে; গলায় বিচিত্র বর্ণ ও আকৃতির পাথরের মালা, হাতে বিশেষ ধরনের লাঠি ও বাদ্যযন্ত্র। লালনধামের ভেতর ও বাইরে নিজেদের পছন্দমতো জায়গা করে নিয়ে চলছে গান-বাজনা। বিচিত্র সব বাদ্যযন্ত্রে বাজছে হৃদয়ছোঁয়া লালনগীতি। একটি দল থামলেই অন্যটি জমিয়ে রাখছে চারপাশ।

সকালে বাল্যসেবা ও দুপুরে বাউলের চারণভূমিতে আসা হাজার হাজার লালনভক্ত, সাধু ও গুরু মরা কালীগঙ্গায় স্নান সেরে পূর্ণ সেবা গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়েই শেষ হয় সাধুসঙ্গ। তখন বেলা তিনটা। লালন একাডেমির প্রধান ফটক বন্ধ। ভিতরে লাইন ধরে ওয়ান টাইম থালা হাতে হাজার হাজার সাধু-ফকিরের অপেক্ষা। সবাই খাবার পাওয়ার পর বিশেষ ধ্বনি তুলে জানিয়ে দেওয়া হলো-বিতরণ শেষ। এরপর একযোগে শুরু হয় আহার। মাছ, ভাত, সবজি ও মিষ্টান্ন দিয়ে লালনধামে আগত বাউল, সাধু ও ফকিররা গ্রহণ করেন পূর্ণ সেবা। কোন উদাসী টানে মানুষ দলে দলে ছুটে আসে-তা কেউ জানে না।

লালনধামের ভেতর পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী বাউল আয়েশা তার সহযোগীদের সঙ্গে একতারা হাতে নেচে-গেয়ে সাঁইজির বন্দনা করছিলেন। কথার পিঠে কথা আর মনের গভীরে আধ্যাত্মবাদ মিশিয়ে গাইছিলেন তিনি। আয়েশা বলেন, লালন নিজেও এভাবেই গান করতেন। তাঁর কাছে ধর্ম, বর্ণ বা জাতপাতের কোনো বিভাজন ছিল না। পুরুষের পাশাপাশি আশ্রয়হীন নারীদেরও তিনি বাঁচার সুযোগ করে দিতেন, সঙ্গে নিয়ে গাইতেন ও নাচতেন। কোনো এক অচিন গাঁয়ের অচেনা মানুষ ফকির লালন এখানে বসেই জীবনভর সন্ধান করেছেন, ‘অচিন পাখি’র সহজ কথায় বেঁধেছেন জীবনের গভীরতম গান।

এদিকে বার বিকেলে আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে লালন তিরোধান দিবসের আয়োজন।

মস‌লেম শেখ নামে এক বাউল বলেন, ‘লালনের গানে মানবতার বোধ, অহিংস ভাব ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার কারণেই দিন দিন তার গানের ভক্ত ও অনুসারীর সংখ্যা বাড়ছে। লালন সাঁইজির এই আদর্শ অনুসরণ করলে সমাজ থেকে হানাহানি দূর হয়ে যেত।’

  • আকরামুজ্জামান আরিফ/এমআই
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর