Logo

সারাদেশ

বাজড়া কমিউনিটি ক্লিনিক এখন জলাবদ্ধতা ও মশার অভয়ারণ্য

Icon

আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২৯

বাজড়া কমিউনিটি ক্লিনিক এখন জলাবদ্ধতা ও মশার অভয়ারণ্য

ছবি : বাংলাদেশের খবর

চারদিকে থইথই পানি। কোথাও গোড়ালি, কোথাও হাঁটু পর্যন্ত। প্রথম দেখায় পুকুর মনে হয়। এমন পরিস্থিতি প্রায় পাঁচ মাস স্থায়ী থাকে।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া কমিউনিটি ক্লিনিকটি এখন রোগীর পরিবর্তে মশা আর ব্যাঙের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টির পানি মাসের পর মাস নিষ্কাশন না হওয়ায় ক্লিনিকটি হয়ে উঠেছে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র। এতে চিকিৎসাসেবা নিতে এসে সাধারণ মানুষ পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৯ সালে গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া এলাকায় গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাজড়া কমিউনিটি ক্লিনিক। এখান থেকে গড়ে ছয় হাজার মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে সেবাকাজ প্রায় ভেঙে পড়েছে। মা ও শিশু স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, টিকাদান, পুষ্টি ও পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবা ব্যাহত হচ্ছে নিয়মিত।

পরিকল্পনার অভাবে আশপাশের তুলনায় নিচু স্থানে ভবনটি নির্মিত হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই চারপাশে পানি জমে। ভারী বর্ষণে ক্লিনিকের ভেতরেও পানি ঢুকে পড়ে।

সরেজমিনে গোপালপুর–চাপুলিয়া সড়কের পাশে অবস্থিত ক্লিনিকটিতে গিয়ে দেখা যায়, চারপাশে জমে থাকা পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। স্থির পানিতে ডেঙ্গুবাহী মশার প্রজনন ঘটছে। ভবনের ভেতরে পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়েছে। আশপাশের ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ায় পানি নামছে না। রোগীদের কাদা–পানি মাড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হচ্ছে। তবুও নারী–পুরুষ ও শিশুসহ ৮–১০ জন রোগীকে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়।

চিকিৎসা নিতে আসা রাফেজা বেগম (৩৫) বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে সর্দি–কাশি ও জ্বরে ভুগছিলাম। কিন্তু পথের পানি ডুবে যাওয়ায় আসতে পারিনি। অবশেষে বাধ্য হয়ে কাদা–পানি মাড়িয়ে ক্লিনিকে এসেছি।’

রোগী মনিরুল ইসলাম আমীন (৫২) বলেন, ‘বছরের প্রায় পাঁচ মাস এভাবে জলাবদ্ধতা থাকে। চারপাশে পানি–কাদা, ছোট-বড় কেউই স্বাচ্ছন্দ্যে ভেতরে যেতে পারে না।’

গৃহবধূ খাদিজা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। অসুখ হলে এই ক্লিনিক ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। কিন্তু এখানে হাঁটুসমান পানি জমে থাকে সব সময়। ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে আসতে গেলে পুরো ভিজে একাকার হয়ে যাই।’

ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) আমেনা বেগম জানান, ‘প্রসূতি ও নবজাতকসহ প্রতিদিন গড়ে ৫০–৬০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু পাঁচ মাসের জলাবদ্ধতায় মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দিন দিন মশার উপদ্রব বেড়েছে। বিভিন্ন পোকামাকড়ও বাসা বাঁধছে। গত এক সপ্তাহে ক্লিনিকের ভেতর থেকে দুইটি বিষধর সাপ মারা হয়েছে।’

ক্লিনিক ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শরিফুল ইসলাম ছোটন বলেন, ‘ক্লিনিকটি নিচু জায়গায় নির্মাণ করায় বছরের অধিকাংশ সময় পানি জমে থাকে। এতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া সংযোগ সড়কটিও সঠিকভাবে নির্মাণ করা হয়নি।’

আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা আছে। ইতোমধ্যে সমস্যাটি সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’

মিয়া রাকিবুল/এআরএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

জনদুর্ভোগ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর