Logo

সারাদেশ

২ বছর ধরে অনুপস্থিত প্রধান শিক্ষক, বেতন তোলেন নিয়মিত

Icon

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:০৬

২ বছর ধরে অনুপস্থিত প্রধান শিক্ষক, বেতন তোলেন নিয়মিত

ছবি : বাংলাদেশের খবর

চলতি বছর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার আনাইতারা ইউনিয়নের ফতেপুর ময়নাল হক স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষায় সব পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক এ.টি.এম. আবদুল মতিনের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। 

অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও কাগজে-কলমে উপস্থিতি দেখিয়ে নিয়মিত বেতন তুলছেন। এমনকি টানা এক বছর বিদ্যালয়ে না থেকেও বিশেষ ক্ষমতাবলে অপ্রাপ্য বেতনও উত্তোলন করেছেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, এক বছর আগে নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের আন্দোলনের মুখে তিনি বিদ্যালয় ত্যাগে বাধ্য হন। এরপর থেকে তিনি আর বিদ্যালয়ে আসেননি। বিষয়টি জানার পর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাজিরা খাতায় তার নামের স্থানে লাল দাগ দেন, যাতে তিনি বেতন তুলতে না পারেন। কিন্তু পরবর্তীতে বিশেষ ক্ষমতাবলে সেই বকেয়া বেতনও তুলে নেন তিনি।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি আবার বিদ্যালয়ে ফিরলেও পুনরায় স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়ে গা-ঢাকা দেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিদ্যালয়ে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হলেও তিনি তা মানেননি। পরবর্তীতে ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি গণ-অভ্যুত্থান ইস্যুকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে স্থানীয় পরিস্থিতির কারণে বিদ্যালয়ে যেতে পারছেন না বলে দাবি করেন, অথচ নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশিকা অনুযায়ী, জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে যেসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তদন্ত চলাকালীন তাদের বেতন-ভাতা চালু রাখতে হবে এবং ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) ব্যবস্থায় তা পরিশোধ করতে হবে। অভিযোগ রয়েছে, এই বিধানকেই কাজে লাগিয়ে তিনি বিদ্যালয়ে না গিয়েও নিয়মিত বেতন নিচ্ছেন। এমনকি একদিনে হাজিরা খাতায় এক বছরের স্বাক্ষর দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘স্যার বিভিন্ন সময় মেয়েদের উদ্দেশে অশোভন মন্তব্য করেন। একদিন আমি বিদ্যালয়ে গেলে স্যার বললেন, ‘হিন্দুরা তো মোটা হয়, পূজার বন্ধে তুমি বেশ মোটা হয়ে গেছ। তোমার ফিগারটা আমার খুব ভালো লাগে, খুব সুন্দর।’

বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘তিনি দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে আসেন না। তাকে চিঠি দেওয়া হলে একদিন আসেন, এরপর আবার অনুপস্থিত থাকেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। ইউএনও’র পরামর্শে আবারও চিঠি পাঠানো হলেও তার আর খোঁজ মেলেনি।’

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জুলফিকার হায়দার বলেন, ‘আমরা মৌখিকভাবে বিষয়টি জেনেছি। তিনি যোগদানের পর থেকেই অনিয়মিত এবং নিয়মিত বেতনও উত্তোলন করেন। যৌন হয়রানির বিষয়ে কোনো অভিভাবক আমাদের লিখিত অভিযোগ দেননি। তবে বিদ্যালয় কমিটি লিখিতভাবে জানালে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক এর আগে কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার কামাল স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করতেন। সেখানেও তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির একাধিক অভিযোগ ছিল, যা নিয়ে একটি মামলা দায়ের হয় এবং বিষয়টি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশনে প্রকাশিত হয়েছিল।

  • রাব্বি ইসলাম/এমআই

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

যৌন নিপীড়ন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর