ফরিদপুরে যুবদল নেতার বিরুদ্ধে কালী মন্দিরের গাছ বিক্রির অভিযোগ
ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪৭
ছবি : বাংলাদেশের খবর
ফরিদপুর সদরের মাচ্চর ইউনিয়নের খলিলপুর বাজারসংলগ্ন বারোনীখোলা কালী মন্দিরের একটি বড় মেহগনি গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে কথিত যুবদল নেতা সাইফুল মোল্লার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মন্দির কমিটি ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই শতাব্দী পুরনো এই কালী মন্দিরে ব্রিটিশ আমল থেকেই স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় ধর্মীয় উপাসনা করে আসছেন। প্রতি বছর চৈত্র মাসে এখানে বারোনী মেলার আয়োজনও হয়ে থাকে। মন্দির প্রাঙ্গণের বিশাল মেহগনি গাছটি ছিল ভক্তদের বিশ্রামের স্থান ও মন্দিরের সৌন্দর্যের অন্যতম অংশ।
অভিযোগ রয়েছে, গত বুধবার মাত্র ২৩ হাজার টাকায় গাছটি জোরপূর্বক কেটে বিক্রি করেন সাইফুল মোল্লা। মন্দির কমিটি বাধা দিলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাছটি কেটে ফেলার পর স্থানটি মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে।
মন্দির কমিটির সভাপতি সত্য রঞ্জন মালো বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষদের আমল থেকে এ মন্দিরে পূজা চলে আসছে। নবাব সিরাজউদ্দৌলার সময় থেকে শুরু করে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল পর্যন্ত পূজা-অর্চনা বন্ধ হয়নি। যে গাছটি কাটা হয়েছে, সেটি আমাদের পূর্বপুরুষরা রোপণ করেছিলেন। সাইফুল মোল্লা কারও কথা শোনেননি, উল্টো এখন হুমকি দিচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘জমিটি একসময় সাইফুল মোল্লার দাদা ফাজিল মোল্লা মৌখিকভাবে মন্দিরের জন্য দান করেছিলেন। যদিও তা লিখিতভাবে নিবন্ধিত হয়নি, পরে সরকারি রেকর্ডে জমিটি মন্দির সম্পত্তি হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। বর্তমানে এটি জেলা প্রশাসকের নামে নিবন্ধিত।’
মন্দির কমিটি ইতোমধ্যে জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সুমির কুমার ঘোষ বলেন, ‘সাইফুল মোল্লা বিএনপির নাম ভাঙিয়ে এলাকায় নানা অপকর্মে জড়িত। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। চোখের সামনে দিয়ে গাছ কেটে নিলেও কেউ কিছু বলতে পারেনি।’
জমিদাতার উত্তরসূরি ও সাইফুলের চাচাতো ভাই মো. মাহফুজ মোল্লা বলেন, ‘গাছটি মন্দিরের জায়গাতেই ছিল। আমাদের পরিবারের যে অংশের জমি ছিল, তা আগেই বাটোয়ারা করে বিক্রি হয়ে গেছে। সাইফুলের কোনো জমি অবশিষ্ট নেই, সে অন্যায়ভাবে গাছ কেটেছে।’
মাচ্চর ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস. এ. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘সাইফুল মোল্লার এই কাজ অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমাদের ঐতিহ্যগত সম্পর্ক রয়েছে। তার এমন আচরণ লজ্জাজনক। তাছাড়া সাইফুল যুবদলের কোনো পদে নেই; বরং সে দীর্ঘদিন আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। জেলা বিএনপির কাছে আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানাব।’
অন্যদিকে স্থানীয় ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রশিদ মোল্লা দাবি করেন, ‘গাছটি মন্দিরের নয়, মোল্লা পরিবারের জমিতেই ছিল।’
অভিযুক্ত সাইফুল মোল্লা অবশ্য গাছ কাটার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘মন্দির কমিটি যে জমির মালিকানা নিয়ে মামলা করেছে, তার খরচ চালাতেই গাছ কাটা হয়েছে। গাছটি আমার চাচা মনি মোল্লার জমিতে ছিল, আর তা আমার বাবার লাগানো।’
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার এএসআই জিয়াউর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অপূর্ব অসীম/এআরএস

