চান্দিনায় জামায়াত প্রার্থীকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে মাইক্রোফোন কেড়ে নিলেন নেতাকর্মীরা
কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ২১:৪৩
ছবি : বাংলাদেশের খবর
কুমিল্লার চান্দিনায় জামায়াতে ইসলামীর কুমিল্লা উত্তর জেলা শাখা আয়োজিত গণমিছিলে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থীকে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দলের একটি অংশ।
তাদের অভিযোগ, মনোনীত প্রার্থী মাওলানা মোশাররফ হোসেন অতীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করেছেন। তবে মোশাররফ হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি কখনো রাজনৈতিকভাবে আপস করেননি।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা বাসস্টেশন এলাকায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পাঁচ দফা দাবিতে আয়োজিত এই গণমিছিলে এ ঘটনা ঘটে। হাতাহাতিতে কেউ গুরুতর আহত হয়নি।
চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ উল ইসলাম বলেন, ‘জামায়াতের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ঘটলেও তারা নিজেরাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিল, তবে বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা যায়, গণমিছিলের শেষ পর্যায়ে চান্দিনা উপজেলার নায়েবে আমির ও কুমিল্লা-৭ আসনের প্রার্থী মাওলানা মোশাররফ হোসেন বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এ সময় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে দলের আরেক পক্ষ। তারা প্রার্থীর হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে স্লোগান দেয়—‘দল বিক্রি চলবে না, আওয়ামী দোসর প্রার্থী মানি না।’ এরপর দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়।
জানা যায়, মোশাররফ হোসেনের বিরোধীরা ব্যারিস্টার মোস্তফা শাকের উল্লাহর সমর্থক। মোস্তফা শাকের উল্লাহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। অন্যদিকে ঘোষিত প্রার্থী মাওলানা মোশাররফ হোসেন স্থানীয় একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রার্থী নির্বাচনে সিন্ডিকেট ও ব্যক্তিস্বার্থের অভিযোগে নেতা–কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। সংঘর্ষের সময় কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের আমির আবদুল মতিন ও জেলা সেক্রেটারি সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন কিছু কর্মী।
চান্দিনা উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সাজিদ আল-আমিন (সোহাগ) বলেন, ‘জেলা আমির ও সেক্রেটারি অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন। অথচ মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য প্রাণ গোপালের সঙ্গে উঠান বৈঠক করেছেন এবং উপজেলা চেয়ারম্যান তপন বকসীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমি কোনো রাজনৈতিক আপস করিনি। উন্নয়নমূলক আলোচনায় অংশ নেওয়াকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। আমি একটি মাদ্রাসার প্রধান, দাওয়াত পেলে যে দলই হোক সেখানে যাই।’
চান্দিনা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রার্থী মনোনয়ন সম্পূর্ণ সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে। কিছু নেতা–কর্মীর মধ্যে ক্ষোভ ছিল, আজ তা প্রকাশ পেয়েছে। তবে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।’
কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঘটেছে। প্রার্থী নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ম অনুযায়ী সম্পন্ন হয়েছে। দলের একাংশ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে—এটাই মূল বিষয়। অন্য অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন।’
এআরএস

