বান্দরবানে চুরির অপবাদে ‘মধ্যযুগীয়’ কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ
বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:৫১
বান্দরবানে চুরির অপবাদে ‘মধ্যযুগীয়’ কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ।
বান্দরবানে চুরির অপবাদে দুই যুবককে ‘মধ্যযুগীয়’ কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে বান্দরবান আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত রোববার (২৬ অক্টোবর) বান্দরবান সদর উপজেলার গোয়ালিয়াখোলা রোয়াজা পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোয়াজা পাড়া এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি তাজউদ্দিন ও উহ্লামং নামের দুই যুবককে চুরির অভিযোগে আটক করে স্থানীয় ১নং ওয়ার্ডের মেম্বারের কাছে নিয়ে যায়। পরে মেম্বারসহ কয়েকজন মিলে একাকার একটি চায়ের দোকানে তাদের লাঠি দিয়ে পেটানোসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে মেম্বার নিজেই প্লাস দিয়ে নক তোলার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি করে।
ভুক্তভোগী তাজউদ্দিনের বাবা আহমদ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, কোনো প্রমাণ ছাড়াই ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার শহিদুলসহ তার সহযোগী কয়েকজন ব্যক্তি নিজেরা বিচারের নামে আমার ছেলেকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্মমভাবে নির্যাতন চালায়। তারা বিচার করার পরও আমার ছেলেকে থানার মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেয়। তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে যদি চুরি করে থাকে, তাহলে তার জন্য আইন-আদালত আছে। আইন-আদালতে তুলে দিতে পারত। কিন্তু তা না করে জায়গা-জমিনের পূর্ব শত্রুতার জেরে আমার ছেলেকে বর্বর নির্যাতন করেছে। আমি এ নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মেম্বার শহিদুল ইসলাম বলেন, তাজউদ্দিন ও উহ্লামং দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েকবার তাদের নামে বিচার করা হলেও পরবর্তীতে তারা এসব অপরাধমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। গত রোববারেও চুরির ঘটনায় এ দুই ব্যক্তিকে স্থানীয়রা ধরে। তারা যেন এ ধরনের কাজ আর কখনো না করে, সেজন্য মারধর করে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তবে নক তোলার বিষয়টি মিথ্যা, তাদের শুধুমাত্র ভয় দেখানো হয়েছিল।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা আহমদ হোসেন বাদী হয়ে বান্দরবান চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে শহিদুল ইসলামকে (৩৬) প্রধান আসামি করে সাতজনের নামে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার অন্যান্য আসামি হলেন- ইছহাক (৫৮), শহিদুল ইসলাম (২৮), শাহ আলম (৬০), ওসমান (৪৫), সুজন (৩০) ও জিকু (২১)। তারা সবাই বান্দরবান সদর উপজেলার গোয়ালিয়াখোলা এলাকার ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
এ বিষয়ে বান্দরবান সদর থানার এসআই বোরহান উদ্দিন বলেন, চুরির অভিযোগে দুজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মারধরটা অতিরিক্ত হয়ে গেছে, এভাবে মারধর করাটা ঠিক হয়নি।’
মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনোয়ার বলেন, বান্দরবান সদর উপজেলার গোয়ালিয়াখোলা রোয়াজা পাড়ায় চুরির অপবাদে বিচারের নামে দুই ব্যক্তিকে প্রথমে লাঠি দিয়ে পরে প্লাস দিয়ে নকে আঘাতের মতো নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে স্থানীয় এক মেম্বারসহ বেশ কয়েকজন। এ সভ্য সমাজে এ ধরনের নির্যাতন কোনোভাবেই কাম্য নয়। যদি তারা চুরি করে থাকে, তাহলে তাদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা উচিত ছিল। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে বান্দরবান চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে সাতজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
সোহেল কান্তি নাথ/এমবি

