তড়কা টিকার নামে কর্মকর্তার নির্দেশে মাঠে চলছে দুর্নীতির ‘ইনজেকশন’
টঙ্গীবাড়ী (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৪৮
আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ২১:১৩
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় গবাদিপশুর তড়কা (অ্যানথ্রাক্স) প্রতিরোধে সরকারি টিকা কার্যক্রমে অনিয়ম ও অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। মাঠ পর্যায়ের প্রাণিসম্পদ কর্মীরা (এলএসপি) প্রতি গরুতে ৫০ টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় খামারিরা। ভ্যাক্সিনেটর থাকার পরও এলএসপিদের মাধ্যমে ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এ নিয়ে চলছে সমালোচনা।
অভিযোগকারীদের দাবি, সরকার স্বল্পমূল্যে বা প্রায় বিনামূল্যে যে টিকা সরবরাহ করেছে, তা দিয়েই চলছে প্রকাশ্য বাণিজ্য। উপজেলার গবাদিপশুর টিকাদান কার্যক্রম থেকে মাঠকর্মীরা হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের এক সূত্র জানায়, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী টিকার মূল্য গরু প্রতি ৮০ পয়সা হলেও পরিবহন ও আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এই অফিস থেকেই, যা অনৈতিক। একটা সরকারি প্রতিষ্ঠানে এমনটা চলতে পারে না।
অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (এলইও) ডা. সিরাজুম মুনিরা মাঠ পর্যায়ের এলএসপিদের চাপ প্রয়োগ করে গরু প্রতি টাকা নিতে বাধ্য করছেন। এতে জড়িত রয়েছেন ভেটেনারি সার্জন ডা. কালী শংকর পাল ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলামও। এলএসপিদের অভিযোগ কর্তৃপক্ষের চাপের মুখে তারা বাধ্য হয়ে টাকা নিচ্ছেন।
দিঘীরপাড় ইউনিয়নের এলএসপি রফিকুল ইসলাম বলেন, এটা আমাদের অফিস থেকে ৫০ টাকা করে নির্ধারণ করে দিয়েছে। আপনি অফিসে যোগাযোগ করুন কিছু জানার থাকলে।
এ বিষয়ে জানতে হাসাইল-বানারী ইউনিয়নের এলএসপি চম্পা দাশের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তা সম্ভব না হওয়ায় তার স্বামী হাসাইল বাজারের ফার্মেসির মালিক বিপ্লবের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিচয় গোপন রেখে ভ্যাকসিন (টিকা) দিতে টাকা লাগে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এদের(অফিসের) নির্দেশে ফি আছে ৫০ টাকা।
স্থানীয় খামারি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি স্বল্পমূল্যের টিকা হলেও মাঠে টাকা ছাড়া টিকা দেওয়া হয় না। অফিস থেকে নির্দেশনা এসেছে, তাই টাকা না দিলে গরুর ক্ষতি হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (এলইও) ডা. সিরাজুম মুনিরা বলেন, “এটা আমাদের সরকারি যে ভ্যাকসিনটা আছে, ওখান থেকেই ভেটেনারি সার্জনের নির্দেশে এলএসপি দ্বারা দেওয়া হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ অফিসে যারা আছে-ভেটেনারি সার্জন এটা নিয়ে ডিল করছে। এটাতে একটা সরকারি রেট আছে, যে ব্যক্তিগুলোকে ফিল্ডে পাঠাচ্ছি তাদেরও কিছু দিতে হয়, কারণ তাদের যাতায়াত খরচ আছে। এজন্যই ওই টাকাটা নেওয়া হচ্ছে। এটা যে দিবে সে পাবে। সরকারি যে রেট আছে, সেই টাকাটা আমার অফিসে জমা হবে। আমাদের এখান থেকে রিসিন্স, নিডলস সব দেওয়া হয়, এগুলো তো আমরা আমাদের টাকা থেকে দেবো না।”
এ বিষয়ে উপজেলা ভেটেনারি সার্জন ডা. কালী শংকর পালের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্বীকার করে বলেন, এলএসপি যারা আছে ৫০ টাকা করে নিচ্ছে। এটার বৈধতা কতটা কতটুকু জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, আপতকালিন একটা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এলএসপিদের সাথে আলোচনা হয়েছে। তাদের সম্মতিক্রমেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম নিজের উপর উঠা দ্বায় এড়িয়ে বলেন, “আমি বিষয়টি অবগত নই। ভিএস সাহেবের সাথে কথা বলে জানাবো।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, সরকারি সেবা যদি টাকায় বিক্রি হয়, তাহলে প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তারা দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিরাজুম মুনিরাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এনআইপি/এনএ

