খ্রিষ্টভক্তদের মোমের আলোয় আলোকিত হলো গারো পাহাড়
 
						শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:৩১
---2025-10-31T172241-69049e06718d0.jpg) 
					ছবি : বাংলাদেশের খবর
শেরপুরের নালিতাবাড়ীর বারমারী সাধু লিওর খ্রিষ্টান ধর্মপল্লীতে দুইদিনব্যাপী ফাতেমা রাণীর তীর্থ উৎসব খ্রীষ্টযাগের (প্রার্থনা) মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে।
'আশার তীর্থযাত্রা; ফাতেমা রাণী মা মারিয়া, বারমারী' মূল সুরে তীর্থ উৎসবে অংশ নেন প্রায় ত্রিশ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক খ্রীষ্টভক্ত। এর মূল আকর্ষণ হলো আলোর শোভাযাত্রা, যা মোমের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে গারো পাহাড়।
ময়মনসিংহ ধর্মপল্লীর পালপুরহিত বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি জানিয়েছেন, ১৯৪২ সালে ফাদার মার্কস বারমারী মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৮ সালে ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশ বারমারী মিশনকে ধর্মপল্লী হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে পর্তুগালের ফাতেমা নগরীর আদলে ফাতেমা রাণীর তীর্থস্থান স্থাপন করা হয়। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহের বৃহস্পতি ও শুক্রবার এই ক্যাথলিক তীর্থ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এবারও আশার তীর্থযাত্রাকে মূল সুরে উদযাপন করা হয়েছে। তিনি জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বিশ্ব মানবতার কল্যাণ, বিশেষ করে বাংলাদেশের শান্তি ও সকল সমস্যার সমাধানের জন্যও এবারের তীর্থযাত্রায় প্রার্থনা করা হয়েছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর গারো পাহাড়ের বারমারী সাধু লিওর খ্রিষ্টান ধর্মপল্লীতে পূর্ণ মিলন, পাপ স্বীকার ও বিকেলে পবিত্র খ্রীষ্টযাগের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ তীর্থ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পরে রাতে আলোক শোভাযাত্রা, আরাধনা, ব্যক্তিগত প্রার্থনা, নিরাময় অনুষ্ঠান ও নিশি জাগরন অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার সকালে জীবন্ত কুশের পথ ও মহা খ্রীষ্টযাগের মধ্য দিয়ে দুই দিনের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান শেষ হয়।
দেশ-বিদেশ থেকে আগত খ্রীষ্টভক্তরা নিজেদের পাপ মোচনের জন্য মোম জ্বালিয়ে আলোর মিছিলে অংশ নেন। প্রায় ৩ কিলোমিটার পাহাড়ি ক্রুশের পথ অতিক্রম শেষে মা মারিয়ার প্রতিকৃতির সামনে সমবেত হয়ে ভক্তরা শ্রদ্ধা জানান, অকৃপণ সাহায্য দেন এবং ভালো ফলাফল, লেখাপড়া সহজ হওয়া ও নিজের মনের বাসনা পূরণের জন্য প্রার্থনা করেন।
তীর্থযাত্রী সুর্য সেন বলেন, ‘আমরা আমাদের ধর্মীয় নিয়মনীতি সঠিকভাবে পালন করতে তীর্থস্থানে আসি। ভালো কাজের জন্য প্রার্থনা করি। মোমবাতি হাতে নিয়ে পুরো তীর্থস্থান ঘুরে মা মারিয়ার কাছে আমাদের আশা জানাই। আমাদের মানত পূরণ করেন মা মারিয়া।’
দামদা মানকিম বলেন, ‘আমি যেন ভালো ফলাফল করে দেশের ও সমাজের মানুষের সেবা করতে পারি, তাই মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি।’
মারিয়া নকরেক বলেন, ‘আমি ক্লাস ফোরে পড়ি। মা মারিয়ার কাছে ভালো ফলাফল কামনা করতে এখানে এসেছি। মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনা করছি।’
ভক্তদের বিশ্বাস, মা মারিয়া তাদের সব চাওয়া পূরণ ও সমস্যার সমাধান করেন। তাই শিশু, যুবক ও বৃদ্ধরা প্রতিবছর এই তীর্থে ছুটে আসেন। দীর্ঘ ২৫ বছর পর এবার জুবিলি উৎসব উদযাপন করা হয় এবং এ উপলক্ষে একটি মেলা বসানো হয়েছিল।
শেরপুরের পুলিশ সুপার মো: আমিনুল ইসলাম জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তীর্থ উৎসব সম্পন্ন করতে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত ছিলেন। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় বিজিবি টিমও সবসময় টহলে ছিল। কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই এবারের তীর্থ উৎসব শেষ হয়েছে।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘উৎসবটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। হাজার হাজার খ্রীষ্টভক্ত এখানে এসেছেন। খ্রিষ্টানদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মের মানুষও উৎসব দেখার জন্য এসেছেন। পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিল এবং নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদা তৎপর ছিল।’
- শাহরিয়ার শাকির/এমআই


 
			