সৈয়দপুর হাসপাতালে শয্যা ও জনবল সংকটে দুর্ভোগ
নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:৫১
নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা হাসপাতালটি এখন নিজেই যেন অসুস্থ। চিকিৎসা সেবা ও পথ্য সেবার মান কিছুটা উন্নত হলেও চিকিৎসক, শয্যা এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর তীব্র সংকটে হাসপাতালের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে আশপাশের সাত উপজেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। আউটডোরে প্রতিদিন (শুক্রবার বাদে) চিকিৎসা নিচ্ছেন আরও ৯০০ থেকে ১ হাজার রোগী। এসব রোগীর মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশই নারী।
রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে ওষুধের সরবরাহ থাকলেও এক্স-রে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও প্যাথলজি টেস্টে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রায়ই সেবা ব্যাহত হয়।
আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা রহিমা বেগম (৪৭) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সকাল ৯টায় লাইনে দাঁড়িয়ে টোকেন পেয়েছি ১০টায়, এরপর দুপুর ১২টার দিকে ডাক্তার দেখাতে পেরেছি। ডাক্তার একজন, রোগী হাজারখানেক। অনেকেই অপেক্ষা করতে না পেরে চলে গেছে। হাসপাতাল আছে কিন্তু ডাক্তার নাই, রোগী আছে কিন্তু বিছানা নাই, ওষুধ আছে কিন্তু পাওয়া যায় না— নামেই ১০০ শয্যার হাসপাতাল।’
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. নাজমুল হুদা বলেন, ‘ভৌগোলিক কারণে সৈয়দপুর হাসপাতাল শুধু নীলফামারী নয়, দিনাজপুরের বেনিরহাট, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর, খানসামা এবং রংপুরের তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জসহ আশপাশের সাতটি উপজেলার মানুষকেও সেবা দিচ্ছে। ফলে এটি প্রায় ২০ লাখ মানুষের একমাত্র চিকিৎসার ভরসাস্থল।’
তিনি জানান, হাসপাতালের ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। এজন্য হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চিঠি চালাচালি চলছে। বর্তমান প্রাঙ্গণেই নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে।
জনবল সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৪০টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১৮ জন চিকিৎসক। ২২টি পদ শূন্য, যার মধ্যে ১১ জন সিনিয়র কনসালট্যান্টের বিপরীতে আছেন মাত্র ১জন। জুনিয়র কনসালট্যান্ট ও অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগেও রয়েছে ব্যাপক শূন্যপদ।’
অন্যদিকে, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ১৮টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন। ফলে হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে ময়লার স্তূপ জমে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। তবুও সীমিত জনবল নিয়ে সেবার মান বজায় রাখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
ডা. নাজমুল আরও বলেন, ‘ওষুধ সরবরাহ ও পথ্য সেবার মান কিছুটা বেড়েছে। রোগীরা সময়মতো তিনবেলা খাবার পাচ্ছেন। তবে জনবল সংকটের কারণে জেলার অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় সেবার মান পিছিয়ে আছে।’
সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আশরাফ হোসেন বলেন, ‘১৯৬২ সালে স্থাপিত ১৭ শয্যার হাসপাতালটি প্রথমে ৫০ শয্যায়, পরে ২০১৩ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু এখনো ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই সেবা চালাতে হচ্ছে, যা একেবারেই অসম্ভব। জনবল সংকটের বিষয়টি ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।’
তৈয়ব আলী সরকার/এনএ

