Logo

সারাদেশ

ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষি বিপর্যয় : ‘সব পরিশ্রম যেন পানিতে গেল’

Icon

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:১২

ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষি বিপর্যয় : ‘সব পরিশ্রম যেন পানিতে গেল’

টানা চার দিনের বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মাঠজুড়ে এখন শুধু জল আর নুইয়ে পড়া ফসল। আধাপাকা আমন ধানগাছ মাটিতে লুটিয়ে আছে, সদ্য রোপণ করা বীজ আলু পানিতে তলিয়ে গেছে।

এ ছাড়া আগাম শীতকালীন সবজি পচে যাওয়ার পথে। এতে কৃষকরা পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়, অনেকেই বলছেন এ ক্ষতি সামাল দেওয়া তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে।

গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেল থেকে শনিবার (১ নভেম্বর) পর্যন্ত জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ো হাওয়ায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালান্দর, রায়পুর, মোহাম্মদপুর, চিলারংসহ পাঁচটি উপজেলার অধিকাংশ এলাকার আমন খেত ও আলুর জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সূত্রে জানা গেছে, এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে জেলার পাঁচটি উপজেলায় মোট ৯৪৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে আমন ধানই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭৯৮ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়াও ১০৯ হেক্টর জমির আলু এবং ৪০ হেক্টর শাক-সবজি ক্ষতির শিকার হয়েছে। গত তিনদিনে জেলায় ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমির আধা কাঁচা ও পাকা ধান এখন মাঠে। এই ধানগাছ হেলে পড়ায় ফলন কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে, শীতকালীন আগাম জাতের আলুর জমিতে পানি জমার কারণে বীজ আলু পচে যাওয়ার উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকরা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের কৃষক রহমান জানান, চার বিঘা জমির ধান এখন কাদা পানিতে হেলে পড়েছে। কাটার সময় এসেছে, কিন্তু জমিতে যাওয়া যায় না। এ ধান যদি এমনই পড়ে থাকে পচে যাবে, সব পরিশ্রম যেন পানিতে গেল

গত সপ্তাহে ঋণ করে আলুর বীজ রোপণ করেছিলাম। এর মধ্যেই টানা বৃষ্টি, জমিতে এখন থই থই পানি। বীজ আলু পচে গেলে আমাদের পথে বসতে হবে। কৃষি বিভাগ থেকে কেউ এখনও দেখতে আসেনি।

সালান্দর এলাকার কৃষক আনিসুর তার হেলে পড়া আমন ধানের ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘আর মাত্র কয়েক দিন, তারপরই ধান কাটতে শুরু করতাম।’ ঝোড়ো হাওয়ায় সব ধানগাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। যেগুলো কাটা হয়েছে, সেগুলোও পানির নিচে ডুবে আছে। এমন ক্ষতি আগে কখনো দেখিনি।’

একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সবজি চাষি আশিক জানান, ‘ফুলকপি ও বাঁধাকপির খেত এখন পুকুর হয়ে গেছে। এ আগাম সবজিই আমাদের ভরসা। এভাবে পানি জমে থাকলে সব পচে যাবে।’

ঠাকুরগাঁও সদর ছাড়াও রানীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গী, পীরগঞ্জ ও হরিপুর উপজেলার বিভিন্ন মাঠেও একই চিত্র। কোথাও ধানগাছ হেলে পড়েছে, কোথাও সবজিক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। খেতে জমে থাকা পানির কারণে পোকামাকড়ের আক্রমণও বাড়ছে।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার এক কৃষক মামুন বলেন, ‘এই সময়ে এমন বৃষ্টি আগে কখনও দেখিনি। এখন ধান কাটার সময়, কিন্তু প্রকৃতি উল্টো পথে চলছে। চাষ করে শান্তি পাই না, এখন ভয় লাগে কখন আবার নতুন দুর্যোগ আসে।’

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসির উল আলম বলেন, ‘বৃষ্টি ও বাতাসে ফসল কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখনই হতাশ হওয়ার কিছু নেই। পানি দ্রুত নামলে ক্ষতি কম হবে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে কৃষকরা দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে পারেন।’

তিনি আরও বলেন, আমন ধান এখন কাটার সময়। যেসব এলাকায় পানি কম, সেখানে দ্রুত ফসল ঘরে তোলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি যেসব চাষি বীজ আলু রোপণ করেছেন, তাদেরকে সেচ ও পানি নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দ্রুততার সাথে জমিতে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে আলুর ক্ষেতের পানি দ্রুত সরিয়ে নিতে হবে, না হলে বীজ আলু পচে যাবে। ধান হেলে পড়লেও যেন ফলন কিছুটা রক্ষা করা যায়, সে জন্য কৃষকদের করণীয় সম্পর্কেও আমরা পরামর্শ দিচ্ছি।’

আবু সালেহ/এনএ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর