নারায়ণগঞ্জে এইচএসসির ফল বিপর্যয় মোকাবিলায় ডিসির মতবিনিময় সভা
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ২১:১৩
ছবি : বাংলাদেশের খবর
২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় নারায়ণগঞ্জ জেলায় পাসের হার ৫২ শতাংশ, যা ঢাকা বোর্ডের ৬৪ শতাংশ এবং জাতীয় গড় ৫৮ শতাংশের তুলনায় অনেক কম। জেলার শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের ভাষায়, এটি শিক্ষাক্ষেত্রে এক ধরনের ‘বিপর্যয়’।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় নারায়ণগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ ড. ফজলুল হক রুমন রেজা মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, করোনাজনিত শিখন ঘাটতি, শিক্ষার্থীদের ক্লাস বিমুখতা, মোবাইল আসক্তি ও কোচিং নির্ভরতা এই খারাপ ফলাফলের মূল কারণ। করোনা-পরবর্তী সময়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় স্থায়ী ক্ষতি হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক রুমন রেজা আরও বলেন, ‘অটো পাস ও সিলেবাস সংকোচনের কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠে আগ্রহ কমে গেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ২০২৪ সালের সহিংসতাও তাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে।’
শিক্ষা কর্মকর্তারা জানান, ইংরেজি, আইসিটি ও হিসাববিজ্ঞানে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। শিক্ষক সংকট, দুর্বল ক্লাস পরিবেশ ও অনুপস্থিতিই এর প্রধান কারণ। নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণে রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপও ফলাফলকে প্রভাবিত করেছে।
সমাধান হিসেবে রুমন রেজা রিমিডিয়াল ক্লাস চালু, ক্লাসে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা, শিক্ষক নিয়োগ ও কোচিং নীতিমালা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ প্রস্তাব করেন, নারায়ণগঞ্জের শিক্ষা খাত পর্যবেক্ষণে একটি ‘শিক্ষা উন্নয়ন টাস্কফোর্স’ গঠন করা হোক। তিনি ইংরেজি ও আইসিটিতে বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালুর পরামর্শও দেন।
সভায় অভিভাবকরা বলেন, শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সন্তানের পড়াশোনায় নজর দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘২২ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১১ হাজার ফেল করেছে—এই চিত্র আমাদের গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অভিযোগ নয়, দায়িত্ব নিতে চাই। এমন শিক্ষা চাই, যা আনন্দের ও মানবিক।’
বিশেষ অতিথি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ একসঙ্গে কাজ করলে এই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দকার এহসানুল কবির বলেন, ম্যানেজিং কমিটিতে অশিক্ষিত সদস্য অন্তর্ভুক্তির দায় শিক্ষা বোর্ডের নয়; এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
প্রধান অতিথি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শোয়াইব আহমাদ খান বলেন, ‘করোনা ও ছাত্র আন্দোলনের কারণে শিক্ষা ব্যবস্থায় ছন্দপতন ঘটেছে। তবে শিক্ষক, অভিভাবক ও প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই পরিস্থিতি কাটানো সম্ভব।’
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. আ. ফ. ম. মশিউর রহমান, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিব, গণসংহতি আন্দোলনের তরিকুল ইসলাম সুজন, প্রেস ক্লাব সভাপতি আবু সাউদ মাসুদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি।
এআরএস

