নির্ঘুম রাত কাটিয়ে পূর্ণিমা তিথিতে সূর্য ওঠার সাথে সাথে কুয়াকাটার সৈকতে পুণ্যস্নান শেষ করেছেন হাজারো সনাতন ধর্মাবলম্বী নর-নারীরা।

বুধবার (৫ নভেম্বর) সকালে পুণ্যার্থীরা স্নানের আগ মুহূর্তে সৈকতে পুণ্যের আশায় কেউ মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে উচ্চৈঃস্বরে গীতা ও চন্ডি পাঠ করেছেন। আবার কেউ হাতে বেলপাতা, ফুল, ধান, দূর্বা, হরিতকি, ডাব, কলা, তেল, সিঁদুর সাগরের জলে অর্পণ করেছে।

এ সময় সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীদের উলুর ধ্বনিতে মুখরতি হয়ে ওঠে পুরো সৈকত। আবার কেউ কেউ মাথার চুল ন্যাড়া করা, প্রায়শ্চিত্ত ও পিণ্ডদান করেন। তবে এ বছর সৈকতে বসেনি মেলা। এর আগে রাতভর কুয়াকাট শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে পূজার্চনা, সঙ্গীতানুষ্ঠান ও মহানাম কীর্তনে মেতে ওঠে সনাতনীরা।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় অধিবাসের মধ্য দিয়ে এ উৎসব শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) সকালে সমুদ্র স্নানের মধ্যদিয়ে এর সমাপ্তি ঘটবে। রাস পূজায় অংশ নিতে পুণ্যার্থীদের ভিড়ের পাশাপাশি পর্যটকদের পদচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো। এই উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে রয়েছে কঠোর নজরদারি।

কুয়াকাটায় পুণ্যস্নানে আসা পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, নানা রকম সমস্যার মধ্যেই এ বছরটা পার করেছি। সামনের দিনগুলো যাতে ভালো কাটে, সে মনোবাসনা নিয়ে কুয়াকাটায় পুণ্যস্নান করতে এসেছি। ভালোভাবেই ধর্মীয় আচার পালন করতে পারায় নিজের কাছে ভালো লাগছে।

গবিন্দ চন্দ্র বড়াল নামে একজন সাগরের পানিতে নেমে মনে মনে কী যেন জপতে লাগলেন। খানিক পর দুহাতে সাগর থেকে পানি নিয়ে স্ত্রী-পুত্রের মাথায়-গায়ে ঢেলে দিলেন। এভাবে ভক্তকুলের নানান রকমের নিয়ম-রীতি পালন করতে দেখা গেল।

কেউ নিজের জন্য, আবার কেউ স্বর্গবাসী মা-বাবার জন্য মানত করে সৈকতের বালুচরে বসে মাথা ন্যাড়া করেন। ভক্ত দাস নামের পুণ্যার্থীরা বলেন, বাবা মারা গেছেন কয়েক মাস হলো। তার নামে মানত করেছিলাম। পূর্ণিমার তিথিতে রাস পূজার সময় মাথা ন্যাড়া করে সে মানত রক্ষা করেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। 

কুয়াকাটা রাস পূজা ও পুণ্যস্নান উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি কাজল বরণ দাস বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারো অমর রাস পূজা উপলক্ষে রাতভর ধর্মীয় সঙ্গীতানুষ্ঠান কৃষ্ণের নাম যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে পুণ্যের আশায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সনাতন ধর্মাবলম্বী নর-নারীরা অংশগ্রহণ করেন। তবে পুণ্যার্থীরা পূর্নিমা তিথিতে সুন্দরভাবেই স্নান সম্পন্ন করেছেন।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মো. কাউসার হামিদ বলেন, ‘রাস উপলক্ষে আমরা বিভিন্ন আয়োজন হাতে নিয়েছি, বরাবরের থেকে একটু আলাদা বিনোদন দিতেই মার্কেটের প্রসার বাড়ানো।’ আলাদাভাবে মোবাইল টয়লেট, চেঞ্জিং রুমসহ নানা আয়োজন করা হয়েছে। যে কারণে এবারের আয়োজন প্রত্যেকটা পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থী উদ্‌যাপন করেছে। পুরোপুরি এই আয়োজন শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে আছি।’

জাকারিয়া আহমেদ/এনএ