Logo

সারাদেশ

পঞ্চগড়ে যাদুকরী সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা

Icon

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:৫৩

পঞ্চগড়ে যাদুকরী সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা

মেঘ সরে ঝকঝকে নীলাকাশ। সাদা মেঘেরা ছোটাছুটি করলেও সুনীল আকাশে এক যাদুকরী সৌন্দর্যে হাসছে পৃথিবীর তৃতীয় সুউচ্চ পাহাড় কাঞ্চনজঙ্ঘা। গত দুইদিন ধরে ঝকঝকে পরিস্কার আকাশে ছবির মতো ভেসে উঠেছে পাহাড়টী। যাদুকরী মায়ায় রূপ মেলা এই পাহাড় থেকে দৃষ্টি সরাতে চাচ্ছে না দর্শনার্থীরা। স্থানীয়রা ভোর সকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখেই পর্যটকদের জানাতে তাদের স্মার্টফোনের ক্যামেরায় ছবি ও ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

আজু বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো ভোরের সূর্যোদয়ের আলোয় পঞ্চগড়ের বিভিন্ন স্থান হতে উত্তরের মেঘমুক্ত আকাশে জেগে উঠতে দেখা যাায় মোহনীয় রূপশ্বৈর্যে ঘেরা কাঞ্চনজঙ্ঘা। গেল অক্টোবরে কয়েকদিন দেখা গেলেও মেঘের বুকে হারিয়ে যাওয়ায় আশাহত করেছে অগণিত পর্যটকদের। কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে আশাহত হৃদয় নিয়ে। আর পর্যটকদের মনের দু:খ অনুভব করে এ অঞ্চলের মানুষগুলোও।

ভোর সকালে উত্তরের আকাশ জুড়ে এমন দৃশ্যমান হয়ে ওঠা কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখে অবাক স্থানীয়রাও। যদিও যুগযুগ ধরে সকালের গৃহস্থালী কাজ করতে গিয়ে দেখে আসছে স্থানীয়রা। কিন্তু সেভাবে গভীর দর্শনে পর্যটকদের মতো এ মায়ারূপের কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখেন না তারা। নিত্যদিনের জীবনের ছায়ালিপি হলেও প্রকৃতি প্রেমিদের জাদুকরী মায়ায় টানছে কাঞ্চনজঙ্ঘা।  

কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেয়ে অনেক খুশি অনিন্দিতা রায় নামের এক পর্যটক। তিনি জানান, ‘অনেক দূর থেকে এসেছি। এসেই স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেল। এমন ঝকঝকে নীল আকাশে ভেসে ওঠা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাব কল্পনাই করিনি। কেননা আমার অনেক ফ্রেন্ডসার্কেল এই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসে না দেখতে পেয়ে নিরাশ হয়ে ফিরে গেছে। সে হিসেবে আমি খুবই সুভাগ্যবান।’

একই কথা বলেন নীলফামারী থেকে আসা সোহেল স্বপন। তিনি জানান, ‘কয়েকদিন ধরেই অবস্থান করছিলাম কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য। আজ দেখতে পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। আসলে কাছ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়া অনুভূতিটাই আলাদা। খুবই ভালো লাগছে।’

ব্যাংকার সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘তেঁতুলিয়াতেই আমার বাসা। আজ ভোর সকালে আমার ফ্যামেলিকে নিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখলাম। অসাধারণ! যদিও প্রায়ই দেখা হয়, কিন্তু আজকের অনুভূতিটা প্রকাশের মতো নয়।’

ছেলেকে নিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখছেন দর্শনার্থী সিরাজুল ইসলাম

স্থানীয় ফুটবল কোচ সাজেদার রহমান রাজু জানান, ‘আমরা স্থানীয় হিসেবে প্রায়ই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখে থাকি। এটি আমাদের নিত্যদিনের দর্শন। আমাদের থেকে এটি পর্যটকদের কাছে বেশি আগ্রহের। আমরা পর্যটকদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি- একমাত্র তেঁতুলিয়া এমন একটা জায়গা, যেখানে বিনে পয়সায় বিনা পাসপোর্ট ভিসায় দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। তাই পর্যটকরা আসুন, এসে উপভোগ করুন।’

কাঞ্চনজঙ্ঘা ঘিরে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের পর্যটন শিল্পে যোগ হয়েছে ভিন্নমাত্রা। পর্বতটি ভারত-নেপালের সীমান্তে অবস্থান করলেও, সেখান থেকে মায়ার সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। কাছের তুলনায় দূরের দৃশ্য যেন বেশি আকর্ষণের। তাই তো বিনাপাসপোর্টে ভারত-নেপালে না গিয়েই তেঁতুলিয়া হতে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাওয়ায় পর্যটন অঞ্চল হিসেবে সমৃদ্ধ হয়েছে জেলাটি। এ অঞ্চলের পর্যটন স্পট ডাকবাংলোর পিকনিক কর্ণার ও মহানন্দা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে দেখা যায় রূপশ্বৈর্য পর্বতমালা কাঞ্চনজঙ্ঘা। এসব স্পটসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে পর্যটকরা দেখছেন, ছবি তুলছেন ও ভিডিও করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

কাঞ্চনজঙ্ঘা পৃথিবীর তৃতীয় এবং হিমালয় পর্বতমালার দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। এটি ভারতের সিকিম রাজ্যের সঙ্গে নেপালের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে অবস্থিত। কাঞ্চনজঙ্ঘার উচ্চতা প্রায় ২৮ হাজার ১৬৯ ফুট বা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার। কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে চারটি নদীর উৎপত্তি ঘটেছে। নদীগুলি বাংলাদেশেও প্রবাহিত হয়। এখান থেকে এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব কাছে থাকায় খুব কাছ থেকে দেখা মেলে অপরূপ সৌন্দর্যের মায়াবী কাঞ্চনজঙ্খা।

হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গ ও পর্যটন ঘিরে গড়ে উঠেছে সরকারি-বেসরকারিভাবে আবাসন ব্যবস্থা। গড়ে উঠেছে পর্যটক সেবা প্রতিষ্ঠান। এতে করে বাড়ছে কাজের ক্ষেত্র।  তেঁতুলিয়া ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম নামের পর্যটক সেবা প্রতিষ্ঠান জানায়, কাঞ্চনজঙ্ঘা ঘিরে দিন দিন বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে আবাসিক, চা বাগানে রিসোর্ট, কাঠের বাড়ির মতো আবাসিক গড়ে উঠছে। এখানকার ভ্যান চালক, হোটেল-রেস্তোরাগুলো পর্যটন সময়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠে সেবা দিতে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক কেএম আজমিরুজ্জামান জানান, ‘দেশের পর্যটনের অন্যতম অঞ্চল হচ্ছে উত্তরের পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। আমরা পর্যটকদের জন্য সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের কন্টাক্ট নম্বরগুলি বিভিন্ন জায়গায় বিল বোর্ডেও প্রদর্শন করেছি। যাতে যে কোনো প্রয়োজনে পর্যটকরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। জরুরি ফোন এলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব।’

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজ শাহীন খসরু জানান, ‘পঞ্চগড় তেঁতুলিয়া একটি পর্যটন এলাকা। এখান থেকে খুব কাছ থেকে হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। পর্যটকদের জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, তার জন্য আমরা সার্বক্ষণিক সচেষ্ট আছি।'

এসকে দোয়েল/আইএইচ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর