শাহরাস্তিতে স্বামীর দায়ের করা যৌতুক মামলায় স্ত্রী কারাগারে
আবু মুছা আল শিহাব, শাহরাস্তি (চাঁদপুর)
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:৪০
আসামি কামরুন নাহার। ছবি : সংগৃহীত
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার বেরনাইয়া গ্রামের গৃহবধূ কামরুন নাহারকে (৩২) স্বামীর দায়ের করা যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারার মামলায় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহরাস্তি আমলী আদালত, চাঁদপুর।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) আদালতের বিচারক তন্ময় কুমার দে এই আদেশ দেন।
আসামি কামরুন নাহার (৩২) শাহরাস্তি উপজেলার বেরনাইয়া গ্রামের মজিবুর রহমানের স্ত্রী। তার স্বামী মজিবুর রহমান গত ২০ জুলাই ২০২৫ যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় শাহরাস্তি আমলী আদালতে সিআর-৩৭১/২০২৫ নম্বর মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২১ আগস্ট আদালত আসামির বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। সমনের পরও তিনি আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় ৫ অক্টোবর বিচারক তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করতে শাহরাস্তি থানা পুলিশ আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান শনাক্ত করে ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় শাহরাস্তির কালীবাড়ি এলাকা থেকে তাকে আটক করে। পরদিন ৪ নভেম্বর মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করলে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক তন্ময় কুমার দে। মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন চাঁদপুর বারের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ সাইফুল মোল্লা।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৯ জুন উল্লাশ্বর গ্রামের আবুল কালামের মেয়ে কামরুন নাহারের সঙ্গে একই উপজেলার বেরনাইয়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মজিবুর রহমানের বিয়ে হয়। দেনমোহর ধার্য্য হয় ২ লাখ টাকা। বিবাহের সময় স্বামীপক্ষ থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার এবং মেহমানদারিতে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়।
বিবাহের পর কামরুন নাহার স্বামীর কাছে নগদ অর্থ, জমিজমা ও শহরে ফ্ল্যাট কেনার দাবি করেন। তিনি স্বামীর কাছ থেকে ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট ১ লাখ ৯৭ হাজার এবং ২০২৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেন, যা ফেরত দেননি।
অভিযোগে আরও বলা হয়, কামরুন নাহার বিভিন্ন পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন এবং সারাক্ষণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যস্ত থাকতেন। পরে জানা যায়, এটি তার চতুর্থ বিবাহ। স্ত্রী যৌতুক হিসেবে স্বামীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অংশ ও জমি নিজের নামে লিখে নেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। এ নিয়ে দাম্পত্য কলহ চরমে ওঠে।
এ ঘটনায় স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সমঝোতার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে মজিবুর রহমান আইনগত ব্যবস্থা নেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ সাইফুল মোল্লা বলেন, যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮-এর ৩ ধারায় যে কেউ যদি যৌতুক দাবি করেন, তা হলে তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধে দণ্ডিত হবেন। স্ত্রী যৌতুক দাবি করলে তার বিরুদ্ধেও মামলা করা যায়। আদালত আমাদের মামলা আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, কামরুন নাহার এর আগেও তিনটি সংসার ভেঙেছেন। তার আচরণে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে। সমাজে এমন ঘটনার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।
এদিকে চাঁদপুরের সুশীল সমাজের একাংশ বলছেন, বর্তমানে পুরুষরাও নারীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অনেকে লোকলজ্জায় মুখ খুলতে পারেন না। সামাজিক নৈতিকতার অবক্ষয়, লোভ, উচ্চাভিলাষ ও পরকীয়ার প্রবণতাই এমন ঘটনার মূল কারণ বলে তারা মন্তব্য করেন।
শাহরাস্তি থানার ওসি মো. আবুল বাশার বলেন, আসামির নামে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। আমরা তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছি।
এআরএস

