ছবি : সংগৃহীত
বরিশালের বাকেরগঞ্জে কৃষক সোহেল খান হত্যার দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে নিহতের পরিবার।
বুধবার (৫ নভেম্বর) বেলা ১১টায় বরিশাল প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহতের মা ও মামলার বাদী মোসাম্মৎ নিলুফা বেগম।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে স্থানীয় প্রভাবশালী ও সন্ত্রাসী চক্রের সদস্যরা তার ছেলে সোহেল খানকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরদিন সকালে পার্শ্ববর্তী খানবাড়ি জামে মসজিদের পাশে কাঁচা রাস্তায় সোহেলের মৃতদেহ পাওয়া যায়। তার শরীরে ধারালো অস্ত্রের কোপ ও লাঠির আঘাতের একাধিক চিহ্ন ছিল।
তিনি দাবি করেন, আমার ছেলেকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য এলাকায় একটি মিথ্যা ডাকাতির নাটক সাজানো হয়। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করি। কিছুদিন পর আসামিদের মধ্যে কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও তারা এখন জামিনে এসে আমাদের নিয়মিত হুমকি দিচ্ছে এবং মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে।
বাদি নিলুফা বেগম আরও বলেন, ‘আমাদের ওপর আসামিপক্ষের ক্রমাগত ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকির কারণে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ইতিমধ্যে থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং–১৫৪, তারিখ ৩ নভেম্বর) করেছি এবং একই তারিখে এলাকাবাসীর গণস্বাক্ষরসহ দরখাস্তও দিয়েছি। কিন্তু এখনো আমাদের কোনো নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি।’
তিনি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান-তার ছেলে সোহেল খানের হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব আসামিকে দ্রুত পুনরায় গ্রেপ্তার করতে হবে। পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। মামলার তদন্ত সঠিকভাবে সম্পন্ন করে দোষীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের স্বজনরা বলেন, সোহেল খান একজন পরিশ্রমী কৃষক ছিলেন। জমিজমার বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রভাবশালী একদল লোক পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে। পরে ঘটনাটিকে ‘ডাকাতি’ বলে প্রচার চালানো হয় যাতে মূল হত্যার বিষয়টি আড়াল করা যায়।
এ সময় বক্তারা বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই প্রশাসনের কাছে অনুরোধ-আমাদের সন্তান হত্যার বিচার যেন ন্যায়সংগতভাবে হয়। হত্যাকারীরা জামিনে থেকে আবারো এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছে। আমরা এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।
এদিকে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকেও ইতোমধ্যে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারা অভিযোগ করেছেন, মৃত সোহেলকে ‘ডাকাত’ আখ্যা দিয়ে মামলাকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ জানিয়েছেন, মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। কিছু আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তদন্ত শেষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, নিহত সোহেল খান (প্রায় ৩৫) বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ৭নং কবাই ইউনিয়নের চর কবাই গ্রামের বাসিন্দা। গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী তাকে ডেকে নিয়ে যায়। পরদিন সকালে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের মা মোসাম্মৎ নিলুফা বেগম বাদী হয়ে বাকেরগঞ্জ থানায় হত্যামামলা দায়ের করেন।
পরিবার বলছে, সোহেল হত্যার বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা ন্যায়বিচারের আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
- জেআই জুয়েল/এমআই

