ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঔষুধ-টিকার তীব্র সংকট
লিটন হোসাইন জিহাদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৩০
ছবি : বাংলাদেশের খবর
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৯টি উপজেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে চলছে তীব্র ওষুধ সংকট। এতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা প্রতিদিনই খালি হাতে ফিরছেন। সেবা না পেয়ে রোগী ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকাদের মধ্যে প্রায়ই বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটছে।
চিকিৎসা নিতে আসা সখিনা বেগম বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। মেয়ের বাচ্চা হবে বলে এখানে এসেছি। ডাক্তার প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দিয়েছেন। আগে বেশিরভাগ ওষুধ এখান থেকেই পাওয়া যেত। এখন দোকান থেকে ৭০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে।’
আকলিমা নামের আরেক নারী বলেন, ‘আগে এখান থেকে চুলকানি, গ্যাস্ট্রিক, কাশি, ভিটামিন আর আয়রনের ওষুধ নিতাম। এখন বলে, ওষুধ নাই।
পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকারা জানিয়েছেন, আগে যেখানে অফিস থেকে ৬০ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হতো, বর্তমানে মাত্র ১০–১২ ধরনের সীমিত ওষুধ দেওয়া হচ্ছে—তাও খুব অল্প পরিমাণে।
একজন পরিদর্শিকা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত আমরা নিয়মিত ৬০ ধরনের ওষুধ পেতাম। এখন ১০–১২ ধরনের অল্প কিছু দেওয়া হয়। এতে রোগীরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন, আমরা নিজেরাও বিব্রত।’
জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে শিশুদের জীবনরক্ষাকারী টিকারও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত টিকা না পাওয়ায় নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে। এতে নবজাতকরা বয়স অনুযায়ী নির্ধারিত টিকা পাচ্ছে না, যা ভবিষ্যতে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, দেড় থেকে দুই মাস বয়সী শিশুদের জন্য পাঁচ ধরনের টিকা—বিসিজি, পেন্টাভ্যালেন্ট, পোলিও, পিসিভি ও রোটা—নির্ধারিত। কিন্তু বর্তমানে কোথাও দুটি, কোথাও মাত্র একটি টিকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
একজন টিকা প্রদানকারী বলেন, ‘প্রতি মাসে যত টিকা দরকার, তার অর্ধেকেরও কম পাওয়া যাচ্ছে। এতে অভিভাবকরা হতাশ, আমরাও অসহায়।” আরেকজন যোগ করেন, “অনেক সময় বাবা-মায়েরা দূর থেকে বাচ্চা নিয়ে আসে, কিন্তু টিকা না থাকায় ফেরত যেতে হয়। এতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।’
অভিভাবক সেলিনা বেগম বলেন, ‘আমার দুই মাসের ছেলেকে পাঁচটি টিকা দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আজ একটাই দিতে পারল। এতে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা জানান, ‘জাতীয় পর্যায়ে টিকার সরবরাহে সাময়িক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সরকার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে। আশা করছি দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘জাতীয় পর্যায়ে টিকা ও ওষুধ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। খুব শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।’
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে এই সংকট চললেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়ে বেসরকারি ক্লিনিক ও ফার্মেসির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। স্বাস্থ্যকর্মী ও অভিভাবকরা দ্রুত ওষুধ ও টিকা সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
এআরএস

