খুলনা বিভাগীয় শিশু হাসপাতাল
একাধিকবার মেয়াদ বাড়ানোর পরও নির্মাণ কাজ অসম্পূর্ণ
খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১০:২১
নিরাপত্তাহীনতা, জনবল সংকট ও নির্মাণ কাজ বাকি থাকায় খুলনা বিভাগীয় শিশু হাসপাতাল বুঝে নিতে পারছে না সিভিল সার্জন দপ্তর। প্রকল্প অনুমোদনের পর প্রথম ধাপের কাজ শেষ করতে সময় ব্যয় হয়েছে প্রায় আট বছর। এ অবস্থায় হাসপাতাল পড়ে থাকলে খুলনা বিভাগের নবনির্মিত এ হাসপাতালটি থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হবে বিভাগের শিশুরা।
জানা গেছে, শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রসারের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে খুলনা বিভাগীয় শিশু হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন মেলে। হাসপাতালটি নির্মাণে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) ময়ূরী আবাসিক এলাকার বিপরীতে সিটি বাইপাস সড়কের পাশে জমি চূড়ান্ত করা হয়। ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসন ৫২ কোটি দুই লাখ টাকায় ৪ দশমিক ৮০ একর জমি অধিগ্রহণ করে গণপূর্ত বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে। গণপূর্ত বিভাগ ২০২০ সালে প্রথম পর্যায়ে হাসপাতালের বেসমেন্ট ও একতলা ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে।
দরপত্রে নির্বাচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রৈতি এন্টারপ্রাইজ ২০২০ সালের ১৪ মে কার্যাদেশ পায়। ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এ কাজের মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে সংশোধিত প্রস্তাবে ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতাল ভবনের দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী স¤প্রসারণের অনুমোদন পাওয়ায় রান্নাঘর, সাবস্টেশন, পাম্পহাউস, সীমানা প্রাচীর, রাস্তা, নালা ও গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রথম ধাপের এ কাজের মেয়াদ শেষ হয় ২০২৩ সালের জুনে। একাধিকবার মেয়াদ বৃদ্ধির পর ২০২৪ সালের জুনে কাগজ-কলমে প্রকল্পের কাজ অবশেষে সমাপ্ত দেখানো হয়।
খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাসপাতালের ভিতর অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রয়েছে। হাসপাতাল মন্ত্রণালয় থেকে নিয়ন্ত্রণ হবে। আলাদাভাবে এখানে তত্ত্বাবধায়ক এবং জনবল নিয়োগ হবে। সিভিল সার্জন অফিসকে শুধু হাসপাতালটি বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল খুলনা সিভিল সার্জন অফিস বুঝে নেওয়ার পর সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ জিনিস চুরি বা ক্ষতি সাধিত হলে পুরো দায়ভার বর্তাবে সিভিল সার্জনের ওপর। এজন্য নিরাপত্তা না থাকায় এবং জনবল না থাকায় একটা জটিলতায় পড়তে হয়েছে।
এছাড়াও প্রধান ফটক, হাসপাতালের সীমানা প্রাচীর এবং কিছু কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। এমন অবস্থায় বিভাগীয় হাসপাতালটি পড়ে থাকলে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবে অসুস্থ শিশুরা।
খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালটি নির্মাণে জমি অধিগ্রহণে কাল ক্ষেপণ হওয়ায় কাজ শুরু করতে ও শেষ করতেও সময় লেগেছে। প্রথম ধাপের পঞ্চম তলা পর্যন্ত কাজ শেষ করে জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ভবন হস্তান্তরের জন্য তিন দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি। ফলে ভবন নির্মাণ হলেও হস্তান্তর করা যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, তিনটি ভবনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। তারমধ্যে রয়েছে একটি বিভাগীয় শিশু হাসপাতালের মূল ভবন, একটি রান্নাঘর ভবন এবং একটি সাবস্টেশন ভবন। এখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বেডের ব্যবস্থা সম্পন্ন করে হাসপাতালটি ব্যবহার করতে পারবেন।
খুলনা সিভিল সার্জন মাহফুজা খাতুন বলেন, কাগজ-কলমে প্রকল্প শেষ দেখানো হলেও হাসপাতাল এলাকার এক পাশে প্রাচীর ও প্রধান ফটক নির্মাণ করা হয়নি। ফলে হাসপাতাল ভবন ও স্থাপনা এলাকা নিরাপত্তাহীনভাবে আছে।
গণপূর্ত ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালটি বুঝে নেওয়ার জন্য খুলনা সিভিল সার্জনের দপ্তরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে একটু জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে একটি টিম গঠন করে আলোচনা করে জটিলতা নিরসনে কার্যক্রম চলছে।

