ফ্রিজে রাখা খুলি ফিরিয়ে দিল মামুনের নতুন জীবন
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:১৩
ছবি : বাংলাদেশের খবর
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মামুন মিয়ার জীবন কেবল রক্ষা পায়নি, তার গল্প চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনুপ্রেরণার এক অধ্যায় হয়ে উঠেছে। মাত্র দুই মাস আগেও তিনি মাথার গুরুতর আঘাত নিয়ে অচেতন অবস্থায় আইসিইউতে শুয়ে ছিলেন। সেই সময় চিকিৎসকেরা এক বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত নেন-মাথার একটি অংশ খুলে তা ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়, যাতে মস্তিষ্কের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
শনিবার (৮ নভেম্বর) চট্টগ্রাম নগরের পার্কভিউ হাসপাতালে এই সংরক্ষিত খুলিটি পুনঃপ্রতিস্থাপন করা হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মু. ইসমাঈল হোসেন নেতৃত্ব দেন সার্জারি টিমে। তিনি জানান, এ ধরনের অপারেশন অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও ঝুঁকিপূর্ণ। দীর্ঘদিন ফ্রিজে সংরক্ষিত খুলি আবার মাথায় প্রতিস্থাপন করতে গেলে সংক্রমণ ও রিজেকশনের আশঙ্কা থাকে।
অপারেশন সফল হওয়ার পর মামুন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন এবং স্বাভাবিকভাবে কথাও বলছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অপারেশনের এই সাফল্যের পেছনে রোগীর মানসিক শক্তি, সহপাঠীদের সমর্থন এবং পরিবারের অটল আশা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
হাসপাতালে চিকিৎসার পাশাপাশি দেখা গেছে মানবিক সংবেদনশীলতা। সহপাঠীরা নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন, শিক্ষকরা প্রতিদিন যোগাযোগ রাখছেন। দীর্ঘ চিকিৎসা ও আশার মিশেলে মামুনের জীবন নতুন করে সজীব হয়ে উঠেছে।
এই ঘটনায় আহত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদও ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নিচ্ছেন এবং সুস্থতার পথে অগ্রসর হচ্ছেন।
চট্টগ্রামের চিকিৎসকরা বলেন, এই অপারেশন প্রমাণ করেছে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা বিশ্বমানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম। ফ্রিজে রাখা খুলির টিস্যু দুই মাস পর জীবন্ত শরীরে ফিরিয়ে দেওয়া কেবল প্রযুক্তির সাফল্য নয়, এটি মানবিকতার জয়। আর সেই জয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছেন মামুন মিয়া-যিনি মৃত্যুর ছায়া থেকে ফিরে এসে আবারও জীবনের হাসি ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
- এমআই

