সোনারগাঁয়ে রাতের আঁধারে বিদ্যালয়ের মালামাল বিক্রির অভিযোগ
সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:৩১
ছবি : বাংলাদেশের খবর
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রাতের আঁধারে নিয়মবহির্ভূতভাবে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালামাল বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (৮ নভেম্বর) রাতে উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের পঞ্চমীঘাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মালামাল ভর্তি তিনটি পিকআপ ভ্যান আটক করে স্থানীয়রা।
এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে সোনারগাঁ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার তত্ত্বাবধানে জব্দকৃত মালামাল রাখা হয়।
জানা যায়, বিদ্যালয়ের পুরনো বেঞ্চ, ফ্যান ও অন্যান্য আসবাবপত্র উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে না জানিয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়ার নির্দেশে প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম দপ্তরি সুমন দাসের মাধ্যমে স্থানীয় ভাঙারি ব্যবসায়ী মহসীনের কাছে বিক্রি করেন। মহসীন রাতের অন্ধকারে তিনটি পিকআপে মালামাল তুলতে গেলে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তারা গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র দেখতে চাইলে মহসীন পালিয়ে যান।
স্থানীয়রা বিদ্যালয়ে গিয়ে সহকারী শিক্ষক মো. বাতেন মিয়াসহ কয়েকজন শিক্ষককে পান। বিদ্যালয় বন্ধ থাকা অবস্থায় রাতের ঘটনায় জানতে চাইলে শিক্ষকরা জানান, ম্যানেজিং কমিটির মিটিংয়ে মালামাল বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল এবং বাকিরা বিক্রির রশিদ দেওয়া হয়নি।
ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। তারা অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িত। সংবাদ মাধ্যমেও এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা তৌকির আহমেদ বলেন, ‘সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মিলে বিদ্যালয়কে নিজেদের সম্পত্তি মনে করে যা খুশি তাই করছে। রাতের অন্ধকারে পিকআপ ভর্তি মালামাল নেওয়ার সময় তারা কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। পরে ভুয়া রশিদ বানিয়ে ঘটনা ঢাকতে চেয়েছেন।’
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, ‘নতুন ভবন নির্মাণের পর পুরনো বেঞ্চ ও ফ্যান বিক্রির জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। বিক্রি করা মালামালের রশিদ রয়েছে। কিছু মহল আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ তবে তিনি স্বীকার করেন, বিক্রির আগে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে জানানো হয়নি।
প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সভাপতির নির্দেশেই মালামাল বিক্রি করা হয়েছে। রশিদ আমাদের কাছে আছে। তবে দরপত্র ছাড়াই বিক্রি করা সঠিক হয়নি, এটা স্বীকার করছি।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে, বিক্রির প্রক্রিয়ায় নিয়মভঙ্গ হয়েছে। তদন্ত চলছে, নথি পর্যালোচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। বর্তমানে মালামাল স্থানীয় ইউপি সদস্যের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।’
স্থানীয়রা দাবি করছেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যাতে ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ নিয়ে অনিয়ম আর না ঘটে।
মো. সজীব হোসেন/এআরএস

