Logo

সারাদেশ

শিক্ষার্থীদের বেতনেই চলছে স্কুল

Icon

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৫৩

শিক্ষার্থীদের বেতনেই চলছে স্কুল

২০১৭ সালে ১৭ জন শিক্ষানুরাগী উদ্যোক্তা মিলে এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ভাইবোনছড়া আইডিয়াল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রথমে প্রাইমারি শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত নামে মাত্র কয়েকজন শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাস চালু করলেও বর্তমানে দশম শ্রেণী পর্যন্ত স্কুলে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫৯ জন।

স্কুলটি  সদর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার নিকটবর্তী হওয়ায় এই স্কুলে অনেক শিক্ষার্থীকে বিনা বেতনে পাঠদান দিয়ে যাচ্ছে স্কুল কতৃপক্ষ। তবে শিক্ষার্থীদের তুলনায় স্কুলের শ্রেণীকক্ষ ছোট ও বাঁশ কাঠের তৈরি হওয়ায় পাঠদান ব্যহত হচ্ছে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের।

শিক্ষার্থীদের পাঠদানের বিনিময়ে যা বেতন পায় তার উপর ভর করে চলছে স্কুল ও শিক্ষকদের সম্মানি। এতো প্রতিকূলতার মধ্যেও ২০২৫ সালে এসএসসি বোর্ড পরীক্ষায় প্রথমবারের মতো ১৯ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ১২জন শিক্ষার্থী এ প্লাস (এ+) সহ শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। যা খাগড়াছড়ি জেলার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে স্বাক্ষর রেখেছে স্কুলটি। স্কুলে শিক্ষকদের প্রচেষ্টা আর শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলে খুশি অভিভাবকরা।

অভিভাবক চাথোইং মারমা বলেন, ‘এই স্কুলে আমার মেয়ে পড়ে। এখানকার শিক্ষকরা খুবই আন্তরিক। ক্লাসের পড়ার শেষে পড়া না বুঝলে শিক্ষকরা আলাদা ক্লাস নিয়ে বুঝিয়ে দেন। তাছাড়া এবছর এই স্কুল থেকে ১ম বার এসএসসি তে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে ১৯জনের মধ্যে ১২ জন শিক্ষার্থী এ+ পেয়েছে। এ স্কুলে আমার মেয়েকে পড়াতে পেরে আমি গর্ববোধ করছি।’

শিক্ষার্থী অর্থী চাকমা বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্তরিক। আমরা ক্লাসে কিছু না বুঝলে সবাইকে আলাদা ক্লাস নিয়ে বুঝিয়ে দেন। তবে আমাদের শ্রেণিকক্ষ খুবই ছোট এবং বাঁশের বেড়ার বেষ্টনী। একটা টেবিলে গাদাগাদি করে ৪/৫ জন এক সাথে বসি। আমাদের শ্রেণিকক্ষ প্রশস্ত করে যদি নতুন ভবনের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আমাদের ক্লাসে পাঠদানের মনোনিবেশে সুবিধা হবে আশা করছি।’

শিক্ষার্থী পুষ্প বড়ুয়া জানান,‘আমাদের বিদ্যালয়ের আন্তরিকতা সাথে আমাদের পাঠদান দেন। তবে আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের তুলনায় শিক্ষক কম হওয়ায় শিক্ষকরা পাঠদানে হিমশিম খাচ্ছেন। বিদ্যালয়ের আর্থিক সমস্যার কারণে শিক্ষক নিয়োগ দিতে পাচ্ছেন না স্কুল কতৃপক্ষ। সরকার যদি বিদ্যালয়ের আর্থিক ও অবকাঠামোগত সমস্যার বিষয়টি সুবিবেচনা করে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পাঠদানে উৎসাহ এবং সুন্দর একটি পরিবেশ পাবে বলে মনে করছি।’

স্কুলের সহকারী শিক্ষক মো. কামরুল হাসান জানান, ‘আমাদের ভাইবোনছড়া থেকে শিক্ষার্থীদের চাঁদের গাড়িতে ঝুলে বা মোটরসাইকেল এ করে ভাঙ্গা কাঁদামাটি রাস্তায় কষ্ট করে খাগড়াছড়ি জেলা শহরে স্কুলে যেতে হতো। তাই আমরা এলাকার ১৭জন মিলে  ২০১৭ সালে এ স্কুলটি করার সিদ্ধান্ত নিই। জানুয়ারি মাস থেকে আমরা স্কুলটি চালু করতে সক্ষম হই। শুরুতে মাত্র ৪৭জন শিক্ষার্থী দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫৯জন। তবে শিক্ষার্থীর তুলনায় আমাদের শ্রেণিকক্ষ আকারে ছোট ও বেড়ার বেষ্টনী হওয়ায় ক্লাস নিতে কষ্ট হয়।’

ছাত্র ছাত্রীদের মাসিক বেতন থেকে স্কুলের যাবতীয় খরচ সহ আমাদের সম্মানি দেয় স্কুল কতৃপক্ষ। এছাড়াও স্কুলে নানাবিধ আর্থিক সমস্যার কারণে আসবাবপত্র সহ অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। সরকার যদি আমাদের স্কুলের বিষয়টি সুবিবেচনা করে তাহলে শিক্ষার্থীদের সুন্দর পরিবেশে পাঠদানের মাধ্যমে আরও ভালো ফলাফল দিতে পারবো আশা করছি।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিমেষ চাকমা বলেন, ‘স্কুলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের জন্য যে ধরনের অবকাঠামো দরকার আমরা সে ধরনের শিক্ষার্থীদের দিতে পারিনি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে আমাদের স্কুলের আর্থিক সংকট রয়ে গেছে। আর দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে আমরা সরকারি দপ্তর যে সহায়তা পাচ্ছি তা পর্যাপ্ত নয়।

যেমন আমাদের ক্লাসরুমে দরকার ১২ টি, আছে মাত্র ৭টি। তো আগামী বছর আমরা হোস্টেল চালু করতে চাচ্ছি ২টা রুম নিয়ে। কারণ প্রত্যন্ত এলাকার অনেক শিক্ষার্থী থাকতে না পেরে পড়ালেখা ঝরে যাচ্ছে। দূর থেকে ২/৪ ঘন্টা পায়ে হেঁটে ভালো ফলাফল করা সম্ভব নয়। আমি সরকার এবং শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি পার্বত্যঞ্চলে শিক্ষার মানোন্নয়নে হোস্টেল স্থাপন করা হয় তাহলে পার্বত্যঞ্চল শিক্ষার দিক দিয়ে অনেক টা এগিয়ে যাবে। আর আমাদের  স্কুলের শিক্ষক সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন স্কুলের প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীকে সম্পদে রুপান্তর করতে পারি।’

স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থাদের কথা সুবিবেচনা করে স্কুলে অবকাঠামো সংস্কার করে আনুষঙ্গিক সরকারি সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতে  দাবি জানান শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও সুশীল সমাজ।

ছোটন বিশ্বাস/এনএ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর