Logo

সারাদেশ

সিডরে একাই ৫ হাজার মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিলেন সিডরম্যান

Icon

খান নাঈম, বরগুনা

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২২

সিডরে একাই ৫ হাজার মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিলেন সিডরম্যান

ছবি : সংগৃহীত

২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানার আগে বরগুনার উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস প্রচার করে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিলেন সিপিপির কর্মী জয়দেব দত্ত। পরে যিনি ‘সিডরম্যান’ নামে দেশ-বিদেশে পরিচিতি পান। আজ সেই বিপর্যয়ের ১৮ বছর পূর্ণ হলো।

বরগুনার তালতলী উপজেলার বড় বগী ইউনিয়নে জন্ম নেওয়া জয়দেব দত্ত ছিলেন সাইক্লোন প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) বরগুনা ইউনিটের প্রধান ও ওয়্যারলেস অপারেটর।

২০০৭ সালের নভেম্বরের ১১-১২ তারিখে উপকূলে বাড়তে থাকে দমকা হাওয়া ও মুষলধারে বৃষ্টি। ক্রমেই স্পষ্ট হয় সাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব। ১৪ নভেম্বর রাতে খাবার খেয়ে শুয়ে পড়েছিলেন জয়দেব। এমন সময় তিনি খবর পান—আবহাওয়া অধিদপ্তর ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করেছে।

সংকেত জারির খবর পাওয়া মাত্রই তিনি ভাড়া করা মোটরসাইকেল ও হাতে মাইক নিয়ে ছুটে যান উপকূলীয় জনপদে। ‘১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত, ২০ ফুট পানি—সবাই নিরাপদ জায়গায় চলে যান’—এই সতর্কতা বারবার প্রচার করতে থাকেন তিনি। রাতভর এবং পরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকে তার প্রচারণা।

জয়দেব দত্তের প্রচেষ্টায় তালতলী উপজেলার পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। এর পরদিন, ১৫ নভেম্বর রাত আটটার দিকে ২৩‍০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার বেগে বরগুনার উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিডর। জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় উপকূলীয় এলাকা। হাজারো বসতঘর, গাছপালা, গবাদিপশু ভেসে যায়। প্রাণ হারান অসংখ্য মানুষ।

সিডরের ভয়াবহতায় উপকূলের লাখো মানুষ নিঃস্ব হলেও জয়দেব দত্তের প্রচারণার কারণে তালতলীতে বড় ধরনের প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হয়। সেই এলাকায় ২৬৪ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেলেও স্থানীয়দের দাবি—তার বার্তা না পেলে হতাহতের সংখ্যা আরও ভয়াবহ হতো।

জয়দেব দত্তকে নিয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে বিশেষ প্রতিবেদন প্রচারিত হয় এবং তাকে ‘সিডরম্যান’ উপাধি দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে তিনি জাতীয় রেড ক্রিসেন্ট অ্যাওয়ার্ডও পান।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির বরগুনা ইউনিট প্রধান জাকির হোসেন মিরাজ বলেন, ‘সিডরে তালতলী উপজেলায় মারা গেছেন ১৫০ জন, নিখোঁজ ১১৪ জন এবং আহত হয়েছেন আড়াই হাজারের বেশি মানুষ। কিন্তু জয়দেব দত্তের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় শত শত মানুষের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে। উপকূলবাসীর কাছে তিনি আজীবন অমর হয়ে থাকবেন।’

২০১৭ সালের ৫ আগস্ট তালতলীর বড় বগী ইউনিয়ন পরিষদের সিপিপি অফিস থেকে জয়দেব দত্তের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পাশে পাওয়া যায় একটি চিরকুট। ধারণা করা হয়, পারিবারিক কলহের জেরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

খান নাঈম/এআরএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ঘূর্ণিঝড়

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর