কালনী নদীর তীরে বেদেদের জীবনসংগ্রাম
মো. আব্দুল হালিম, সুনামগঞ্জ
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৩
ছবি : বাংলাদেশের খবর
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চান্দপুর গ্রামের পাশে কালনী নদীর তীরে বহুদিন ধরে বসবাস করে আসছেন বেদে সম্প্রদায়ের একটি বিশেষ গোত্র—গাইন বেদে।
লোকজ চিকিৎসা, ভেষজ ওষুধ, তাবিজ-কবজ প্রস্তুত ও বিক্রি, সাপ ও বানরের খেলা দেখানো, কসমেটিকস বিক্রি, জাদুবিদ্যা প্রদর্শন এবং শিঙ্গার সাহায্যে শরীরের বাত-ব্যথা উপশম—এসব তাদের পেশার অংশ।
দাঁতের ব্যথা বা দাঁতের পোকা তোলাও তাদের ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসার অন্তর্ভুক্ত। এইসব প্রদর্শনী ও চিকিৎসার মাধ্যমে তারা বহু বছর ধরে মানুষের বিনোদন ও সেবা দিয়ে আসছেন।
চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী বেদেরা সাধারণত নৌকায় বসবাস করে ঘাটে ঘাটে ঘুরে বেড়ায়। দেশের হাওরাঞ্চলে নৌকায় থাকার বিষয়টিকে তারা স্বাচ্ছন্দ্য মনে করেন। যদিও এখন অনেকেই ডাঙ্গায় স্থায়ী বসতি গড়ে তুলছেন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে ব্যবসা, চাকরি ও অন্যান্য পেশায় যুক্ত হচ্ছেন।
দিরাই পৌর শহরের সেনমার্কেট থেকে রিকশায় দশ মিনিটের পথ টুক ফেরিঘাট। ফেরি পার হয়ে টুক হাঁটা পথ পেরিয়ে চান্দপুর এলাকার কালনী নদীর তীরে পৌঁছাতে হয়। বর্ষাকালে সেখানে নৌকা ছাড়া যাতায়াত সম্ভব নয়। হেমন্তের অর্ধেক সময় পায়ে হেঁটে যেতে হলেও পেক-কাদা মাড়িয়ে চলতে হয় এলাকাবাসীকে।
স্থানীয় গাইন বেদেরা জানান, স্বাধীনতার পর থেকেই তারা এই নদীর তীরে বসবাস করছেন। এর আগে তারা রফিনগর এলাকায় থাকতেন। সম্প্রদায়ের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য লেচু মিয়া ও আক্কল আলী—দুজনেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং বেদে সম্প্রদায়ের সর্দার।
তারা বলেন, ‘আমরা দিনে আনি দিনে খাই। খুবই কষ্টের জীবন। সন্তানদের কেউ স্কুলে পড়ে, আবার অনেককে টাকার অভাবে পড়ানো যায় না। আয় কমে যাওয়ায় সংসার চালানো কঠিন হয়ে গেছে। সরকারি কোনো সহায়তাও পাই না।’
তাদের অভিযোগ, শীতের মৌসুমে নৌকায় থাকার কারণে চরম কষ্ট সহ্য করতে হয়। শীতবস্ত্রের অভাব দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেয়। সম্প্রদায়ের অর্ধশতাধিক মানুষের বাস ১২টি নৌকায়—এর মধ্যে সাতটিতে সৌর বিদ্যুৎ থাকলেও বাকিগুলোতে আলো নেই। খুপি বাতি জ্বালিয়ে রাত কাটাতে হয়, আর এসব বাতি নষ্ট হলে মেরামতেরও ব্যবস্থা থাকে না।
অনেকেই পূর্বের পেশা ছেড়ে দিনমজুরি বা দোকানে কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন। কেউ কেউ জায়গা কিনে ঘরও তুলেছেন। তবে এলাকায় সড়ক না থাকায় সব সময়ই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
গাইন বেদেদের দাবি, ‘সরকারিভাবে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা ও সড়ক তৈরি হলে আমরা বেশ উপকৃত হবো।’
দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সনজিব সরকার বলেন, ‘চান্দপুর এলাকায় কালনী নদীর তীরে বসবাসরত বেদে সম্প্রদায়ের সমস্যাগুলো সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এআরএস

