বরিশালে বাসভাড়া নিয়ে সংঘর্ষে অচল পরিবহন ব্যবস্থা
বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:১৪
বরিশালে বাসভাড়া নিয়ে সামান্য তর্ক–বিতর্ক থেকে শুরু হওয়া উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত রূপ নিয়েছে ব্যাপক সহিংসতায়। শনিবার সন্ধ্যায় নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থী ও বাসশ্রমিকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক বাস, একাধিক কাউন্টার ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে।
নুর পরিবহনের একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। রাত ৯টার পরে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সহিংসতার পর রোববার ( ১৬ নভেম্বর ) সকাল থেকে বরিশাল–ঢাকা রুটসহ নথুল্লাবাদ টার্মিনাল থেকে সব অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। কাউন্টার ভাঙচুর, কম্পিউটার লুটপাট ও অসংখ্য বাস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় স্বাভাবিক পরিবহন সেবা কবে চালু হবে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে গভীর অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভাড়া নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতির জেরে শিক্ষার্থীরা টার্মিনালে অবস্থান নেওয়া বিভিন্ন যানে হামলা চালান। অপরদিকে শ্রমিকরাও গোল চত্বরে জড়ো হয়ে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করেন। উত্তেজনার মধ্যে বরগুনা, পটুয়াখালী, কুয়াকাটা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরগামী বহু যাত্রীবাহী যানবাহন আটকা পড়ে।
এক শ্রমিক আল আমিন বলেন, ‘ভাড়া নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। তারা ড্রাইভারকে মেরেছে। আমাদের শ্রমিকও তো তখন মারবে। এরপর আরও লোক এসে বাস ভাঙচুর করেছে।’
বিএম কলেজের শিক্ষার্থী রাজু অভিযোগ করেন, ‘আমাদের এক ছাত্রকে হেনস্তা করা হয়। খবর পেয়ে আমরা গেলে শ্রমিকরাই উল্টো হুমকি–ধমকি দিয়ে হামলা চালায়।’
বিএমপি এয়ারপোর্ট থানার ওসি আল মামুন উল ইসলাম বলেন,‘ভাড়া নিয়ে তর্কের বিষয়টি মীমাংসার পথে ছিল। কিন্তু উত্তেজনাকর একটি মন্তব্যের কারণে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়। প্রথমদিকে নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পরে তা আর রাখা সম্ভব হয়নি।’
তিনি দাবি করেন, সংঘর্ষে কেউ হতাহত হয়নি। তবে কতটি বাস ভাঙচুর হয়েছে, তার সঠিক হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি।
বিএম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শেখ মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘হাফ ভাড়া কেন্দ্র করে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়েছে। পরে তার বন্ধুরাও হামলার শিকার হয়। এটি অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।’
বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি মোশারেফ হোসেন জানান, ‘টার্মিনালের সব বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। কাউন্টার ভাঙা, টাকা–পয়সা লুট-সবই হয়েছে। হাজারের মতো লোক ছিল। ছাত্র নাকি বহিরাগত, নিশ্চিত নই। ক্ষতির পরিমাণ এত বেশি যে আজ বাস চালানো সম্ভব হয়নি।’
সহিংসতার কারণে নগরের সবচেয়ে বড় পরিবহন কেন্দ্রটি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও বাস–কাউন্টার মেরামতের কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। রাজধানী–মুখী যাত্রীসহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক জেলায় চলাচলকারীদের ভোগান্তি আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গাজী আরিফুর রহমান/এনএ

