পদ্মার বিশাল ‘বালুর রাজ্য’ এখন অবৈধ চক্রের দখলে
আকরামুজজামান আরিফ, কুষ্টিয়া
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২১:৩৮
ছবি : বাংলাদেশের খবর
কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীর বিশাল বালুর রাজ্য যেন গনিমতের মাল। কোটি কোটি টাকার এই বালু লুটেপুটে নেওয়া হচ্ছে, তবুও কেউ দেখে না। অভিযোগ রয়েছে, কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের কিছু পর্যায়ের মৌখিক নির্দেশনায় অবৈধভাবে এই বালু উত্তোলন হচ্ছে।
গত রোববার (১৬ নভেম্বর) কুষ্টিয়া জেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সম্পাদক ও সদর উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আবেদুর রহমান আন্নু বালুর ট্রলার থেকে জেলা প্রশাসকের খাস আদায়ের টাকা তুলতে গেলে নিখোঁজ হন।
পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, আবেদুর রহমান আন্নুকে পরিকল্পিতভাবে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তিনি জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বালুর ট্রলার থেকে খাস আদায় করতেন। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৌখিক নির্দেশনা বা খাস আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটি) কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে চিঠি পাঠিয়েও অবৈধ চক্রের কার্যক্রম রুখতে পারছে না। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাইকোর্টে রিটের অজুহাতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিগত ১৭ থেকে ১৮ বছর ধরে কুষ্টিয়া, পাবনা ও নাটোর জেলায় পদ্মা নদী থেকে শত শত কোটি টাকার বালু উত্তোলন করছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই চক্রটি স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় কাজ করেছে বলে অভিযোগ আছে। ১০ নভেম্বর বিআইডব্লিউটি কুষ্টিয়া, নাটোর ও পাবনার জেলা প্রশাসক এবং কুষ্টিয়া ও পাবনা জেলা পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। তবে তারপরও বালুখোদের তৎপরতা থামেনি।
বিআইডব্লিউটি চিঠিতে জানিয়েছে, বর্তমানে মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স নাটোর জেলার লালপুর উপজেলাধীন পদ্মা নদীর দিয়ারবাহাদুরপুর বালু মহালের বৈধ ইজারাদার। এই প্রতিষ্ঠান ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকায় বালু মহলটি নিয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, অন্যান্য জেলায় আর কোন বৈধ বালু উত্তোলনকারী নেই। তবে দীর্ঘ ১৭-১৮ বছর ধরে মেসার্স বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স শাওন এন্টারপ্রাইজ এবং মেসার্স আনোয়ারুল হক মাসুমের মতো প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। এতে সরকার শত শত কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং বৈধ ইজারাদার মোল্লা ট্রেডার্স মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, এসব প্রতিষ্ঠান এবং তাদের নিয়োগকৃত লোক ও ক্যাডাররা সশস্ত্র অবস্থায় নদীতে পাহারায় থাকে। প্রতিদিন শতাধিক নৌকা ও বাল্কহেড দিয়ে তারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।
মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্সের প্রোপাইটর শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঈশ্বরদীর সারাঘাট ও কুষ্টিয়ার হরিপুর সীমান্তে জাকারিয়া পিন্টু ও টনি বিশ্বাস অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উল্টো আমার বৈধ ইজারার টিকিট কাউন্টার ও রান্নাঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার বালুঘাটে আসা নৌকাগুলোকে মারধর করে টাকা আদায় করা হচ্ছে। আমি এর প্রতিকার চাই।’
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আবদুল ওয়াদুদ জানান, ‘কাউকে বালু উত্তোলনের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাই কোন খাস আদায়ের প্রশ্নই ওঠে না। বিআইডব্লিউটিএ’র চিঠিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কারো বালু উত্তোলনের অনুমতি নেই। যারা তুলছে, তারা অবৈধ। আমাদের অভিযান চলবে।’
লক্ষ্মীকুন্ডা নৌ পুলিশের ওসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নদীতে টহল দিচ্ছি। যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে, তারা আমাদের দেখলেই পালিয়ে যায়।’

কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘হঠাৎ করে কিছু বলতে পারব না। চিঠি আগেও এসেছে। এটি পরীক্ষা করে আমরা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ের আলোকে ব্যবস্থা নেব।’
এমএইচএস

