ছবি : বাংলাদেশের খবর
রাস্তার দুই পাশে, ফসলের মাঠে কিংবা বাড়ির আঙিনায়-যেখানে খেজুর গাছ আছে, সেখানেই চলছে পরিচর্যা। খেজুর গাছের রস সংগ্রহে সু-নিপুণ হাতে খেজুর গাছের মাথা পরিচর্যা করছেন গাছিরা।
গাছিরা আশা করছেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই রস সংগ্রহ করে তৈরি হবে খেজুরের গুড়, যা পৌঁছে যাবে জেলার গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। গ্রামের ঘরে ঘরে ধুম পড়বে নড়াইলের গুড়ের সঙ্গে বাহারি পিঠার স্বাদ। শীত যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে গাছিদের এ ব্যস্ততা।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ২৩ হাজার ৫৫০টি খেজুর গাছ রয়েছে। এ থেকে ৩৫৪ মেট্রিক টন খেজুর রস সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যে রস থেকে ৫৩ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদন হবে।

গাছ পরিচর্যা করতে আসা কবীর মোল্যা বলেন, ‘শীতের শুরুতে আমরা খেজুর গাছগুলোর মাথা পরিষ্কার করছি। এক সপ্তাহ পর থেকে গাছে ঢিলে পাতা হবে। রস থেকে আমি গুড় তৈরি করি। জেলায় গুড়ের চাহিদা ভালো। প্রতি কেজি গুড় ৩ শত টাকায় বিক্রি হবে। এ বছর রস ও গুড় বিক্রি করে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় করতে পারব।’
গাছিরা জানান, নড়াইলে খেজুর রস ও গুড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জেলায় যে পরিমাণ রস ও গুড়ের চাহিদা আছে, সেই পরিমাণ উৎপাদন হয় না। কাঁচা রস কিনতে বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতারা গাছ তলায় ভিড় করেন।
খেজুর গাছ পরিচর্যা করতে আসা শেখহাটি গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খেজুর গুড় ও রসের চাহিদা অনেক। তুলারামপুর, শেখহাটি, বেনহাটি, মুলিয়া, আগদিয়া থেকে লোক এসে গাছতলা থেকে রস কিনে নিয়ে যায়। এখানে যে পরিমাণ রসের চাহিদা আছে, সেই পরিমাণ রস সংগ্রহ করা যায় না। কারণ খেজুর গাছ কম।’
গাছিরা জানান, প্রতিবছর কমছে খেজুর গাছ। এতে জেলায় খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। নতুন করে গাছ না লাগালে নড়াইলের ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস ও গুড় হারিয়ে যেতে পারে।
দেবভোগ গ্রামের পরিমল বিশ্বাস বলেন, ‘রাস্তার দুই পাশে লাগানো খেজুর গাছ প্রতি বছর কেটে নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ইট ভাটা মালিকরা এই গাছ কিনে নেন। যদি এভাবে খেজুর গাছ কাটা হয়, তাহলে দিন দিন নড়াইল থেকে খেজুর গাছ কমে যাবে।’
নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান জানান, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত রস সংগ্রহে কৃষি বিভাগ উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত গাছিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
- কৃপা বিশ্বাস/এমআই

