নতুন ৫ মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট সাবেক মেয়র আইভী
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:২১
ছবি : সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংঘটিত চারটি হত্যা মামলাসহ মোট পাঁচটি মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার দেখাতে পুলিশের আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের পৃথক দুটি আমলি আদালতে শুনানি শেষে বিচারক এ আদেশ দেন বলে জানান আদালতের পুলিশ পরিদর্শক কাইউম খান।
তিনি বলেন, ‘ফতুল্লা থানার চারটি হত্যা মামলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সেলিনা খাতুন এবং সদর থানার সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার মামলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মাইমানাহ আক্তার মনির আদালতে শুনানি হয়।’
শুনানির সময় গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন অভিযুক্ত সাবেক সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।
গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) মামলাগুলোর শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের “লকডাউন” কর্মসূচির কারণে তা পেছানো হয়।
গত ৯ মে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংঘটিত একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে গত ছয় মাস ধরে আইভী গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে বন্দি ছিলেন। পরে আরও চারটি মামলায় তাকে “শ্যোন অ্যারেস্ট” দেখায় পুলিশ।
গত ৯ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আইভীকে পাঁচটি মামলায় জামিন দেন।
ওইদিনই নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ তাদের উপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধার অভিযোগে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে আদালতে আবেদন করে। পরদিন ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় আরও চারটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে আবেদন করে। তবে এই পাঁচ মামলার কোনোটিতেই আইভী এজাহারভুক্ত আসামি নন।
এদিকে, পাঁচ মামলায় আইভীকে জামিন দিয়ে হাইকোর্টের আদেশ গত বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত স্থগিত করেছে।
মঙ্গলবার আদালতে আইভীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আওলাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এই মামলাগুলোতে আইভী আসামি নন, কোথাও তার নাম নেই। গ্রেপ্তার কোনো আসামিও ঘটনার সঙ্গে তার জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি দেয়নি। আইভী হাইকোর্টে পাঁচটি মামলায় জামিন পেয়েছিলেন, কেবল তার কারামুক্তি বিলম্বিত করতেই পুলিশ তড়িঘড়ি করে নতুন পাঁচটি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্টের আবেদন করেছে।’ তিনি জানান, এ বিষয়ে তারা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন।
নতুন করে গ্রেপ্তার দেখানো মামলাগুলো হলো- বাস চালক আবুল হোসেন মিজি হত্যা মামলা, আব্দুর রহমান হত্যা মামলা, মো. ইয়াছিন হত্যা মামলা, পারভেজ হত্যা মামলা এবং সদর মডেল থানায় পুলিশের উপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার মামলা।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, গত বছরের ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বাস চালক আবুল হোসেন মিজি (৩২)। পরে ২১ আগস্ট নিহতের মা সাহিদা বেগম থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
একইদিন দেলপাড়া এলাকায় গুলিতে মারা যান ১৮ বছর বয়সী মো. ইয়াছিন। তার ভাই মো. সিপন ২৮ আগস্ট থানায় মামলা দায়ের করেন।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কের ভূঁইগড় এলাকায় মারা যান পারভেজ (২৩)। তার বাবা সোহরাব মিয়া ২২ আগস্ট থানায় মামলা দায়ের করেন।
একই এলাকায় ২২ জুলাই গুলিতে মারা যান আব্দুর রহমান (৬৬)। পরে ৮ সেপ্টেম্বর তার ছেলে মো. ফয়সাল মামলা দায়ের করেন।
এদিকে, চলতি বছরের ৮ মে রাতে নগরীর দেওভোগে আইভীর বাসভবন “চুনকা কুটিরে” পুলিশ অভিযান চালায়। এলাকাবাসীর বাধায় রাতভর ওই বাড়িতেই পুলিশ অবস্থান করে। পরে সকালে আইভী স্বেচ্ছায় পুলিশের গাড়িতে ওঠেন। পথে বঙ্গবন্ধু সড়কের কালিরবাজার মোড়ে আইভীকে বহনকারী পুলিশের গাড়িতে স্থানীয় যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা ইট-পাটকেল ছোড়েন। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
পরে ১২ মে রাতে এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে, যেখানে আইভীর সমর্থক আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়। এ মামলায় স্থানীয় এক সংবাদকর্মী ও তার পরিবারের দুইজন সদস্যও গ্রেপ্তার হন।
- ইমতিয়াজ আহমেদ/এমআই

