ভোরের অন্ধকার কাটার আগেই নাটোরের বনপাড়া–হাটিকুমরুল মহাসড়কের নয়াবাজার ও মানিকপুর এলাকায় জমে ওঠে শ্রমের হাট।
কারও হাতে কোদাল, কারও হাতে কাস্তে-এক দিনের জীবিকা নিশ্চিত করতে ভোর পাঁচটা থেকেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে শত শত মানুষ। সিরাজগঞ্জ, পাবনা, জয়পুরহাট, তাড়াশ, রায়গঞ্জ, সলঙ্গা, মান্নাননগরসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট ট্রাক, লেগুনা ও অটোতে চেপে আসে শ্রমিকরা।
পণ্য নয়, এই হাটে কেনা-বেচা হয় মানুষের শ্রম। দিনের পরিশ্রমের মূল্য ধরা হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। একই কাজ করেও নারী শ্রমিকরা পান কম মজুরি-২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। বৈষম্যের মধ্যেই তারা লড়াই করেন টিকে থাকার।
নারী শ্রমিক কুলসুম বেগম বলেন, ‘পুরুষের সমান কাজ করি, কখনো বেশি করি, তবুও আমাদের মজুরি কম।’
আরেক নারী শ্রমিক পারুল আক্তার বলেন, ‘অনেক দিন কাজই দেয় না। কাজ না হলে ঘরে হাঁড়ি জ্বলে না। তাই ভোরে এসে দাঁড়িয়ে থাকি।’
দিনভর মাঠে কাজ শেষে সন্ধ্যায় ফিরে যান শ্রমিকরা। ধান কাটাসহ রসুন রোপণ ও জমি প্রস্তুতির মৌসুম হওয়ায় এ সময় শ্রমিকের চাহিদা বেশি থাকে। কৃষিকাজ চালাতে এ শ্রমই গৃহস্থদের ভরসা।
গৃহস্থ আব্দুল করিম বলেন, ‘এখন শ্রমিকের চাহিদা বেশি, তাই মজুরিও কিছুটা বেড়েছে। তবু কৃষিকাজ চালাতে হলে এ শ্রমিকদের ওপরই নির্ভর করতে হয়।’
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুল ইসলাম খান বলেন, ‘নাটোরে প্রয়োজনের তুলনায় শ্রমিক কম। তাই প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার শ্রমিক এই হাটে আসে। শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি নির্ধারণে প্রশাসনিক উদ্যোগ নেওয়া হলে শ্রমিক ও কৃষক-উভয় পক্ষই উপকৃত হবে।’
নাজমুল হাসান/এনএ

