Logo

সারাদেশ

রপ্তানি সংকটে সৈয়দপুরের তৈরি পোশাক

Icon

নীলফামারী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:৫৮

রপ্তানি সংকটে সৈয়দপুরের তৈরি পোশাক

বাংলাদেশের খবর

উত্তরের জেলা নীলফামারীর বাণিজ্যিক শহর সৈয়দপুরের তৈরি জ্যাকেট, টুপি, ট্রাউজার, মোবাইল প্যান্ট ও সোয়েটার প্রতিবারের ন্যায় রপ্তানি হলেও, এবার রাজনৈতিক জটিলতার কারণে ব্যবসায়ী ও কারিগররা আর্থিক সংকটে পড়েছেন।

এ ব্যাপারে, সৈয়দপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সৈয়দ মনজুর হোসেন জানান, ২০২২-২৩ সালে এসব পোশাকের বড় অংশ রফতানি হতো ভারত, নেপাল ও ভুটানসহ দেশের অন্যান্য বাজারে।

২০২৪ সালের পর থেকে ভারতে রপ্তানি বন্ধ থাকায় অনেকটা লোকসানের মুখে পড়েছে জ্যাকেট ও টুপি প্রস্তুতকারী ব্যবসায়ীরা।

রপ্তানিমুখী ক্ষুদ্র গার্মেন্টস মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, শীত আসার আগে থেকেই সৈয়দপুরে জ্যাকেট তৈরি শুরু হয়েছে। এসব জ্যাকেট এখন গুদামজাত করা হচ্ছে। শহরের প্রায় ২ শতাধিক গার্মেন্টস কারখানায় দিনে-রাতে তৈরি করছে জ্যাকেট, টুপি, ট্রাউজার ও অন্যান্য শীতের পোশাক।

এখানে কারখানা গড়ে উঠেছে শহরের পাড়া-মহল্লায়। প্রতিটি কারখানাগুলোয় রয়েছে ২০ থেকে ২০০টি অত্যাধুনিক সেলাই মেশিন। শীতের তৈরি পোশাকের কাঁচামাল (ঝুট কাপড়) সংগ্রহ করা হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের বড় বড় গার্মেন্টস থেকে।

শহরের নয়াটোলা মহল্লার এইচ আর গার্মেন্টসের মালিক হামিদুর রহমান জানান, ‘এ বছর তিনি ৫০ লাখ টাকার অর্ডার পেয়েছেন। অথচ ২০২৪ এর আগে প্রায় প্রতিটি শীত মৌসুমে কোটি টাকারও বেশি অর্ডার পেয়ে থাকেন। অর্ডারকৃত শীতবস্ত্র নভেম্বরের শেষে পাঠানো হতো। কিন্তু সেটা এবারে হচ্ছে না। তাই সামান্য ক'জন টেইলার্স (দর্জি) মাস্টার দিয়ে সেলাইয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি স্থানীয় চাহিদার জন্য।’

শহরের নিয়ামতপুর নিমবাগান মহল্লার বাসিন্দা রনো জানান, ‘আধুনিক ৫০টি সেলাই মেশিন নিয়ে একটি মাঝারি কারখানা নিজ বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন তিনি। একেকজন শ্রমিক দিনে ৮ থেকে ১০টি জ্যাকেট তৈরি করেন। এতে তারাও যেমন মজুরি পেয়ে লাভবান হচ্ছে, পাশাপাশি আমরা ব্যবসায়ীরাও খরচ মিটিয়ে লাভের মুখ দেখছিলাম।’

তিনি আরও জানান, ২০২৪ এর আগে তার কারখানায় তৈরি করা জ্যাকেট ভারতের শিলিগুড়িতে পাঠানো হত। চলতি শীত মৌসুমে বিভিন্ন কারখানা থেকে ৭-৮ কোটি টাকার জ্যাকেট সৈয়দপুর শহরে তৈরি হলেও ভারতে রপ্তানি না হওয়ায় শ্রমিক, মালিক লোকসানের মুখে পরতে পারেন।

উপজেলা শহরের মুন্সিপাড়া, সাহেবপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, কয়ানিজপাড়া, চাঁদনগর, সৈয়দপুর প্লাজাসহ গ্রামীণ জনপদে গড়ে উঠেছে কয়েকশ কারখানা। এসব কারখানায় তৈরি শীতের পোশাক বিদেশে রপ্তানি করতে না পেরে স্থানীয়ভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতিটি জ্যাকেট ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

সৈয়দপুরের রপ্তানিমুখী ক্ষুদ্র গার্মেন্টস কারখানা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাহিন আকতার জানান, এবার স্থানীয়ভাবে কিছু অর্ডার পাওয়া গেছে। ব্যাংকগুলো সুদ মুক্ত আর্থিক সহায়তা দিলে ব্যবসায়ীরা এ ব্যবসা আরও বাড়াতে পারতো। এতে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে।

তিনি আরও জানান, সৈয়দপুরের বেশির ভাগ গার্মেন্টস কারখানা রেলের জমিতে গড়ে ওঠায় ঋণ দিতে চায় না ব্যাংকগুলো। ফলে অনেক ব্যবসায়ী অর্থের অভাবে তাদের ব্যবসা বাড়াতে পারছেন না। এসব বিষয়ে সরকার সুদৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

এ ব্যাপারে, বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সৈয়দ মনজুর হোসেন জানান, লাভের আশায় ও স্থানীয় চাহিদা মেটাতে জ্যাকেটসহ শীতের পোশাক তৈরি করে গুদামজাত করা হচ্ছে। রাজনৈতিক নানা জটিলতার কারণে বাইরের দেশে শীতের কাপড় পাঠানো যাচ্ছে না। তবে দ্রুত এটির সমাধান হবে বলে আশা করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

তৈয়ব আলী সরকার/এনএ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

পোশাক খাত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর