জামায়াতের ভূমিকা রহস্যময়
ফেনীতে শিবির নেতা সালমান হত্যাকাণ্ড, আ.লীগ পতনের ২ বছরেও মামলা হয়নি
ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:২৪
ছবি : সংগৃহীত
ফেনী শহরে পুলিশের গুলিতে ছাত্রশিবির নেতা হাফেজ আবদুল্লাহ আল সালমান খুনের ঘটনা ঘটেছে ১১ বছর হতে চললেও এখনো মামলা হয়নি। জামায়াত-শিবির এমনকি নিহতের পরিবারের সদস্যরাও মামলা করেননি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুরোনো ঘটনার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হয়েছে। তবে গত দুই বছরে সালমান হত্যাকাণ্ডে কোনো মামলা হয়নি। এ নিয়ে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
সূত্র জানায়, জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর ঘোষণার প্রতিবাদে ২০১৪ সালের ১০ ডিসেম্বর রাতে আদালতপাড়া সংলগ্ন খাজুরিয়া রাস্তার মাথায় শিবির নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশ হামলা চালালে মিছিলকারীরাও পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। ঘটনাস্থলে শিবির নেতা হাফেজ আবদুল্লাহ আল সালমান গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নিকটস্থ কসমোপলিটন হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সালমান আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসায় দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তাকে ফুলগাজী উপজেলার উত্তর করইয়া এলাকার কাজী বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সেই সময় ফেনী মডেল থানার ওসি মো. মোয়াজ্জেম হোসেন নিজেই গুলি করে সালমানকে মেরেছেন বলে বিভিন্ন স্থানে দাবি করতেন। পুলিশ সদর দপ্তরেও সালমান হত্যাকাণ্ডকে ‘একজন সন্ত্রাসীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে’ হিসেবে নোট পাঠানো হয়েছিল।
সোনাগাজীর আলোচিত মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যার আগে তার বক্তব্য ভিডিওতে ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার দায়ে ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে ৮ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন আদালত। তিনি ইতোমধ্যেই উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়েছেন।
ছাত্রশিবিরের ফেনী শহর সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, হাফেজ সালমান বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ১৮৭তম শহীদ ও ফেনী শহর শাখার প্রথম শহীদ। মামলার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সালমানের বাবা বাদী হতে রাজি না হওয়ায় মামলা অগ্রগতি পায়নি।
তৎকালীন শহর সভাপতি তারেক মাহমুদ বলেন, পুলিশের গুলিতে সালমান হত্যাকাণ্ড দিবালোকের মত স্পষ্ট। তার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট রয়েছে। অথচ তখন জামায়াত ও ছাত্রশিবির নেতাকর্মীদের আসামি করে পাল্টা মামলা দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ পতনের পরও সালমান হত্যার মামলা না হওয়া দুঃখজনক।
শিবিরের একাধিক নেতা জানান, সালমান হত্যার মধ্য দিয়ে ফেনীতে প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের ঘৃণ্য রাজনীতি শুরু হয়েছিল। পতিত আওয়ামী লীগ আমলের অনেক ঘটনার মামলা হলেও সালমান খুনের মামলা না দিয়ে জামায়াত নেতারা রহস্যজনকভাবে নিরব রয়েছেন।
জামায়াতের জেলা সহকারি সেক্রেটারি ও ছাত্রশিবিরের সাবেক শহর সভাপতি অ্যাডভোকেট জামাল উদ্দিন বলেন, ‘সালমান হত্যাকাণ্ড ফৌজদারি অপরাধ, তাই মামলা যেকোনো সময় করা যেতে পারে। পরিবার রাজী না হওয়ায় বিলম্ব হচ্ছে। তবুও আমরা মামলার তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করছি।’
এম. এমরান পাটোয়ারী/এআরএস

