ফেনীতে রেড ক্রিসেন্ট ভোটার চিঠিতে কারসাজি, নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে শঙ্কা
ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:১১
ছবি : বাংলাদেশের খবর
ফেনী জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের ‘কার্যনির্বাহী কমিটির’ নির্বাচনের জন্য আজীবন সদস্যদের ডাকযোগে পাঠানো বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) আমন্ত্রণপত্র ও ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে দেখা দিয়েছে ‘ভৌতিক কাণ্ড’।
ঠিকানা সঠিক থাকা সত্ত্বেও অনেক আজীবন সদস্য ডাকবিভাগ থেকে চিঠি পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে ভোটার ও প্রার্থীদের মনে নির্বাচনের স্বচ্ছতা এবং ভোটার উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট সূত্রে জানা যায়, ফেনী ইউনিটের মোট ১,৬৯৭ জন আজীবন সদস্যকে ডাকযোগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৬২ জন সদস্য মৃত। অভিযোগকারীদের দাবি, ডাক বিভাগ বহু চিঠি ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে না। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে সরাসরি ইউনিট অফিস থেকে ভোটার আইডি সংগ্রহ করছেন, আবার অনেকে এখনো নির্বাচনের বিষয়টি জানেন না।
এদিকে চিঠি না পাওয়ায় নির্বাচনে ভোটার কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ ভোটার কার্ড ব্যতীত এ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই।
একাধিক প্রার্থী অভিযোগ তুলেছেন, নির্বাচনের পেছনে একটি মহলের কারসাজি রয়েছে। তাদের দাবি, একটি পক্ষ কৌশলে নির্দিষ্ট কিছু ভোটারকে ভোটদান প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখতে চায়। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার অশোক বিক্রম চাকমা এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, অনেকেই ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন, আবার অনেকে আগের ঠিকানায় থাকছেন না। এজন্য কিছু চিঠি ফেরত এসেছে। যারা চিঠি পাননি, তারা ইউনিটে এসে চিঠি নিতে পারছেন। বিকল্প সুযোগ ১৯ তারিখ পর্যন্ত, প্রয়োজনে ২০ তারিখ সকাল পর্যন্ত থাকবে। আগামী ২২ নভেম্বর উৎসবমুখর পরিবেশে সকল ভোটারের উপস্থিতিতে ভোট নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত ৭০–৮০ জন ভোটার ডাক বিভাগের চিঠি না পাওয়ায় নতুন কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন, যা মোট ভোটারের মাত্র এক-পঞ্চম। রেজিস্টার্ড সরকারি ডাকযোগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠি ‘গায়েব’ হওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের কাছে রিসিভ কপি আছে। যারা চিঠি পাচ্ছেন না, তারা আসছেন, বিকল্প ব্যবস্থা থাকায় কারও ভোটাধিকার ব্যাহত হবে না।
নির্বাচনের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে অশোক বিক্রম চাকমা বলেন, ভোটের দিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশসহ সব ব্যবস্থাই থাকবে। ভোটার কার্ড ছাড়া কাউকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
এদিকে নির্বাচনে এজেন্ট সংখ্যা নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচনে ছয়টি বুথে ৩২ জন প্রার্থীর প্রত্যেকের ৬ জন করে মোট ১৯২ জন এজেন্ট থাকতে পারবে। এতজন এজেন্ট থাকলে নির্বাচন প্রভাবিত হতে পারে বলে কিছু মহল শঙ্কা প্রকাশ করছে। তবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, এটি প্রার্থীদের অধিকার। এতে ভোটে প্রভাব পড়বে না, সব প্রার্থী ৬ জন করে এজেন্ট দেবেন এমনও নয়।
ফুলগাজীর আজীবন সদস্য রবিউল আজিম চৌধুরী রাহাত, যিনি নির্বাচনে প্রার্থী, বলেন, পোস্ট অফিস বলেছে আমার নামে কোনো চিঠি আসেনি। অন্য কেউ নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলল, তা-ও না। ঠিকানা সঠিক থাকা সত্ত্বেও চিঠি পাইনি। পরে ইউনিট অফিসে আবেদন করে কার্ড পেয়েছি। আমার পরিচিত আরও ১০–১২ জন একই সমস্যায় পড়েছেন। এতে ভোটাররা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
রাহাত অভিযোগ করেন, ডাক বিভাগ চিঠি না দিয়ে কয়েকজনের চিঠি একসঙ্গে বিতরণ করছে। এতে ভোটারদের উপস্থিতি কমে যেতে পারে। অনেকেই জানেনই না চিঠি এসেছে। ফুলগাজীর এক ডাক বিভাগের কর্মকর্তার কথায়ও মিলেছে এমন ইঙ্গিত।
গোপনে ধারণকৃত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একজন আজীবন সদস্যের চিঠি দপ্তরেই নেই বলে পোস্ট অফিসের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অথচ সংশ্লিষ্ট সদস্য দাবি করছেন তার ঠিকানা পুরোপুরি সঠিক।
ফেনী প্রধান ডাক বিভাগের পোস্টমাস্টার মো. কামাল হোসেন বলেন, যেসব চিঠি দেওয়া হয়েছিল সব বিলি করা হয়েছে। অনেকের ঠিকানা অসম্পূর্ণ ছিল, অনেকে মারা গেছেন। এসব চিঠি ফেরত এসেছে, যা রেড ক্রিসেন্ট অফিসে জানানো হয়েছে। চিঠি আসলে না দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এরপরও অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- এম. এমরান পাটোয়ারী/এমআই

