চট্টগ্রামে পোলট্রি খামারিদের নীরব কান্না : ঋণে জর্জরিত বহু খামারি
আবুল কালাম আজাদ, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:০৩
ছবি : বাংলাদেশের খবর
জাতীয় অর্থনীতিতে প্রায় ২.৪% অবদান রাখা পোলট্রি শিল্প আজ হুমকির মুখে পড়েছে। দেশে বেকারত্ব কমানো ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টিতে পোলট্রি শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম।
তবে বর্তমানে পোলট্রি খামারিরা নানা সমস্যার সম্মুখীন। ফিড ও ওষুধের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগবালাই, উৎপাদনের খরচ পূরণে ব্যর্থতা-এসব কারণে শত শত খামারির খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। ঋণে জর্জরিত হয়ে অধিকাংশ খামারি মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
দেশের প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি পূরণে এই শিল্প বিশেষ ভূমিকা রাখে। দেশের ৬০ শতাংশ জনগণ-বিশেষ করে দারিদ্র্য ও মাধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠী-পোলট্রি মুরগী ও ডিমের উপর নির্ভরশীল।
এমএইচ পোল্ট্রির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি প্রতি মাসে ৩০ হাজার ব্রয়লার মুরগী উৎপাদন করি। ১ কেজি মুরগী উৎপাদনে খরচ হয় ১৫০ টাকা, কিন্তু বিক্রি হয় কেজি ১২০ টাকায়। এক মাসে আমার ক্ষতি প্রায় ১৫ লাখ টাকা। ব্যাংক লোন পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছি। এভাবে চলতে থাকলে খামারিরা নিঃস্ব হয়ে যাবে।’
খামারিদের অভিযোগ, ফিড ও বাচ্চা উৎপাদন কোম্পানিরা উচ্চমূল্যে ফিড ও বাচ্চা বিক্রি করে প্রান্তিক খামারিদের হাজার কোটি টাকা দেবে। উদাহরণস্বরূপ, ১ দিন বয়সের মুরগির খরচ ২৫ টাকা হলেও কোম্পানি ৪৮–৫০ টাকায় বিক্রি করছে। ৫০ কেজির খাদ্যের দাম ৩,৩০০ টাকা।
লোহাগাড়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসার সেতু ভূষণ দাশ বলেন, ‘শীতকালে মাছের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তাদের মধ্যে পোলট্রি মাংসের চাহিদা কিছুটা কমেছে। চাহিদা কম থাকায় দামও কমে গেছে। কিন্তু খামারিদের উৎপাদন খরচ কমেনি, তাই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সরকার সরাসরি দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তবে খামারির সুরক্ষায় ভর্তুকি বা প্রণোদনার ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।’
স্থানীয় খামারিদের দাবি, সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া এই শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে। দেশের পোলট্রি শিল্প রক্ষা না করলে বিদেশি কোম্পানির আধিপত্য তৈরি হতে পারে এবং জাতীয় অর্থনীতি ব্যাপক ঝুঁকির মুখে পড়বে।
- এমআই

