নওগাঁয় ধানের দামে অস্থিরতা, ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষকেরা
নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:০৬
ছবি : বাংলাদেশের খবর
নওগাঁ জেলায় চলতি মৌসুমে ধান কাটা–মাড়াই সম্পূর্ণ শেষ হয়নি। জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, এখনো প্রায় ৫০ শতাংশ ধান কাটা–মাড়াই বাকি। কৃষকরা বলছেন, মৌসুম এখন মধ্যভাগে, পুরোপুরি শেষ হতে আরও ১০–১৫ দিন লাগবে। এই অবস্থায় বাজারে ধানের দরপতন নিয়ে তারা আরও বেশি উদ্বিগ্ন।
সরকার চলতি মৌসুমে প্রতি কেজি ধানের দাম ৩৬ টাকা এবং প্রতি মণ ১,৪৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু স্থানীয় নিয়ামতপুর ছাতড়াহাট, মহাদেবপুর, মাতাজি, মান্দা চৌবাড়িহাট, সতীহাটসহ কয়েকটি হাটবাজারে কৃষকেরা জানাচ্ছেন, প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১,০৫০ থেকে ১,১০০ টাকায়—যা ঘোষিত দামের তুলনায় অনেক কম।
মান্দা উপজেলার কৃষক আব্দুল লতিফ (৫২) বলেন, ‘এখনো অনেক জমির ধান কাটা বাকি। শ্রমিক ও সারের দাম অনেক বেড়েছে। কিন্তু বাজারে ধানের দাম শুনলেই বুক ভেঙে যায়। মণপ্রতি ১,০৫০ টাকায় ধান বিক্রি করলে লোকসান ছাড়া কিছুই থাকে না।’
মহাদেবপুরের কৃষক মোসলেম উদ্দিন (৪৮) বলেন, ‘সরকার ঘোষিত দরে ধান কেনে খুব অল্প পরিমাণে। ক্রয়কেন্দ্রে আমাদের ধান নেওয়া হয় না। আর বাজারে দালালরা কম দামে কিনে নিচ্ছে। এখনো অনেক ধান কাটা বাকি-যদি দাম আরও কমে, তাহলে বড় বিপদে পড়ব’।
পত্নীতলার নারী কৃষক রোকসানা খাতুন (৩৫) বলেন, ‘শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে, উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এর মধ্যে আবার ধান কাটাও পুরো শেষ হয়নি। বাজারে দাম আরও কমতে পারে-এ ভাবনায় দিনরাত দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে।’
অন্যদিকে ধান ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ বাড়ছে, কিন্তু নগদ টাকার সংকট এবং মিল মালিকদের কম কেনার কারণে দাম ধরে রাখা যাচ্ছে না।
নওগাঁ সদর বাজারের ব্যবসায়ী হাসানুজ্জামান রনি বলেন, ‘ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন কঠিন হয়ে গেছে। মিলগুলোও ধান কম কিনছে। তাই আমরা বেশি দামে ধান কেনার অবস্থায় নেই।’
মান্দা বাজারের ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ধান কাটার মৌসুম চলছে, সরবরাহ বাড়ছে। কিন্তু নগদ সংকটের কারণে দাম বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।’
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোছা. হোমায়রা মন্ডল বলেন, ‘এখনো জেলার প্রায় অর্ধেক ধান কাটা–মাড়াই বাকি। ধান কাটার গতি বাড়ায় বাজারে সরবরাহও বাড়ছে। আমরা মাঠপর্যায়ে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সুপারিশ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি ক্রয় কার্যক্রম যাতে সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, সে বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কৃষকরা যাতে ক্রয়কেন্দ্রে ধান দিতে পারেন, সেজন্যও আমরা নজরদারি করছি।’
- এম এ রাজ্জাক/এমআই

