অক্সিজেন ছাড়াই অপারেশন, গৌরনদীতে প্রসূতির মৃত্যু
গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:৩৪
ছবি : বাংলাদেশের খবর
বরিশালের গৌরনদীতে সিজারিয়ান অপারেশনে অবহেলার অভিযোগে সাথি আক্তার পরী (২২) নামে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় রোগীর স্বজন ও স্থানীয়রা ক্লিনিক ভাঙচুর করেন। শনিবার রাতে উপজেলার বাটাজোর হাট এলাকার মদিনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সাথি আক্তার উজিরপুর উপজেলার ভরশাকাঠি গ্রামের ইমন আকনের স্ত্রী। রোববার (২৩ নভেম্বর) সকালে পরীর স্বামী ইমন আকন চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৫–৬ জনকে আসামি করে গৌরনদী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
পরীর শ্বশুর নজরুল আকন জানান, প্রসব বেদনা শুরু হলে শনিবার বেলা ১১টার দিকে পরীকে মদিনা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক রাজিব কর্মকার কয়েকটি পরীক্ষা–নিরীক্ষা করান।
ফলাফল দেখে জানান, নরমাল ডেলিভারি সম্ভব নয়, সিজার করতে হবে। পরিবারের আপত্তি থাকলেও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বরিশাল থেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক এনে অপারেশন করানোর আশ্বাস দেয়।
নজরুলের অভিযোগ, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চিকিৎসক সমিরন হালদার অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করেন এবং প্রায় এক ঘণ্টা পর সিজার সম্পন্ন করেন। নবজাতক হস্তান্তরের আধাঘণ্টা পর পরীকে বেডে আনা হলে তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন এবং শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা জানান, ক্লিনিকে অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই—বাইরে থেকে আনতে হবে।
একজন স্টাফ অক্সিজেন আনতে বের হয়ে আর ফেরেননি। পরীর অবস্থা অবনতির পর ডাক্তার রাজিব কর্মকার এসে পরীক্ষা করে দ্রুত বেরিয়ে যান। পরে ক্লিনিকের সব স্টাফ পালিয়ে যায়। স্বজনরা পাশের একটি ক্লিনিক থেকে চিকিৎসক এনে পরীক্ষা করালে তিনি জানান, পরী মারা গেছেন। এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা ক্লিনিক ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসকদের অবহেলা, জরুরি সরঞ্জামের ঘাটতি, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও যথাযথ চিকিৎসা না থাকায় পরীর মৃত্যু হয়েছে।
অভিযুক্ত চিকিৎসক সমিরন হালদারের মোবাইলে ফোন করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষও পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। মালিক এনামুল হক ডালিম, ডা. সমিরন হালদার, ডা. রাজিব কর্মকারসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সাহতা জারাব সালেহিন বলেন, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ক্লিনিকটির লাইসেন্স নবায়ন নেই বলেও জানান তিনি। তদন্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এস এম মিজান/এআরএস

